শেখ হাসিনার পদত্যাগই ‘যৌক্তিক পরিণতি’

Hashinaসব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও এই নির্বাচনের পদক্ষেপ হিসেবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পদত্যাগই খালেদা জিয়া ঘোষিত চলমান আন্দোলনের ‘যৌক্তিক পরিণতি’।

খালেদা জিয়া ‘যৌক্তিক পরিণতি’ বলতে কী বুঝিয়েছেন তা জানতে চাইলে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেতারা এ তথ্য দেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলন চলছে। আমরা দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। একটি যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
২০ দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন করে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিক ভুল করেছে। এখন সেই ভুলের খেসারত আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সেই দায় জনগণ কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। যে রাজনৈতিক সমস্যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন্ম দিয়েছেন, সেই সংশোধনী বাতিল করে সমস্যার সমাধান তাকেই করতে হবে। সে জন্য সরকারকে অবশ্যই আলোচনা শুরু করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই সকলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি বের হয়ে আসবে। তার আগে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারণ হবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার পদ্ধতি কী হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা  বলেন, ‘সরকার চলমান আন্দোলন বন্দুকের জোরে যতই নিবৃত্ত করতে চাক না কেন, জনগণের এ আন্দোলন দমাতে পারবে না। দেশের মঙ্গল কামনা করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে নির্দলীয় ব্যবস্থায় সকলের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্যই আমরা বার বার আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি। যদিও ক্ষমতায় টিকে থাকার মরিয়া বাসনা নিয়ে তারা এখনো সাড়া দিচ্ছে না।’
গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া সরকারকে দ্রুত আলোচনার উদ্যোগ নিতে ৭ দফা প্রস্তাবনা দেন। জোটের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে খালেদা জিয়া সেদিন বলেন, ‘দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সে অবস্থার অবসান ঘটান না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এ সঙ্কট উত্তরণে অনতিবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে  বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা এই আন্দোলন করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত অবরোধ চলবে।’
হাফিজ আরও বলেন, বিএনপি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। একটা বছর আমরা সরকারের দিকে তাকিয়েছিলাম। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে আমরা তাদের সময় দিয়েছি। তারা বলেছিল, ৫ জানুয়ারির পর তারা দেশে দ্রুত নির্বাচন দেবে। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি।
২০ দলীয় জোট শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম চলমান আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধান সম্পর্কে বলেন, ২০ দলীয় জোট নেতা ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ঘোষিত যৌক্তিক সমাধানের দু’টি ধাপ রয়েছে। দু’টি পর্ব আছে। একটি হচ্ছে— পরিবেশ সৃষ্টি করতে আলোচনা শুরু করা। আরেকটি হচ্ছে— সর্বদলীয় অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য একটি যৌক্তিক তারিখ নির্ধারণ করা। তার পর আলোচনা শুরু হলেই নির্ধারণ হবে, সেই সময়ের সরকার পদ্ধতি কী হবে।
তিনি বলেন, আলোচনা শুরুর আগেই তো লাইন বাই লাইন বলে দেওয়া যায় না। তাহলে আলোচনাটা হবে কী নিয়ে।
ইবরাহিম আরও বলেন, তারাতো (সরকার) আলোচনা শুরুই করতে চায় না। চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে দ্রুত আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ থেকে সরকারের আর কোনো পথ খোলা নেই।
চলমান আন্দোলনে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করায় এই রাজনৈতিক সমস্যার সূত্রপাত। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সেই পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা এককভাবেই নিয়েছেন। সংবিধান সংশোধনীর জন্য গঠিত ১৫ সদস্যের সকল সদস্য সর্বসম্মতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা জনমতের তোয়াক্কা করেননি।’

 

সূত্র: দ্য রিপোর্ট

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend