সাড়ে ১৬ হাজার টাকায় গৃহকর্মী নেবে সৌদি আরব
আটশ রিয়েল বেতনে বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিচ্ছে সৌদি আরব। বাংলাদেশের টাকায় যা প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার (১৬, ৫৯২) টাকা। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন ডোমেস্টিক সার্ভিস ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক একটি চুক্তি সই হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর সৌদি আরবে বাংলাদেশের কর্মী প্রবেশ করছে।
চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার এবং সফররত সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণায়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী ড. আহমদ আল ফাহাইদ স্বাক্ষর করেন। এ সময় উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তিতে স্বাক্ষর শেষে প্রবাসী কল্যাণ সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হল। গত দুই দিন দুই পক্ষ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সৌদির রিক্রুটিং এজেন্সি সানারকম এবং আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সি বায়রার নেতারাও বসেছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে আমরা আজ এ চুক্তি করছি। চুক্তি অনুযায়ী গৃহস্থালি খাতে ১২টি ক্যাটাগরিতে লোক যাবে। এরমধ্যে শুধু একটি পেশা তথা গৃহকর্মীদের (নারী) ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়েছে ৮শ রিয়েল। কর্মীদের প্লেন ভাড়া, ভিসা ও ট্যাক্সসহ (লেভি) যাবতীয় খরচ বহন করবে নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে তারা।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব বলেন, অন্য ১১টি পেশার জন্য কোনো মজুরি নির্ধারণ হয়নি। কেন নির্ধারণ হয়নি তা জানতে চাওয়া হলে ইফতেখার হায়দার বলেন, আমরা কোনো মানদণ্ড ঠিক করিনি। কারণ আমার শ্রমিকরা অভিজ্ঞ হলে আরও বেশি মজুরি পেতে পারে। যদিও ঠিক করা হয়নি তবে মজুরি কোনোভাবে ৮শ’ রিয়েলের কম হবে না।
চুক্তি অনুয়ায়ী সৌদি আরবে এখন শুধু গৃহকর্মী (নারী) নেবে। পরবর্তীতে মালী, চালক, দাঁড়োয়ানসহ ১১টি পেশার লোক নেবে। সৌদি আরবের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে গিয়েই দূতাবাসের মাধ্যমে ডিমান্ড পাঠাবে এবং খুব দ্রুতই গৃহকর্মী প্রেরণ শুরু হবে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ সচিব।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব জানান, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজ করবে। সেটি না হলে নিয়োগকর্তার সঙ্গে কথা বলে সমঝোতার ভিত্তিতে মজুরি ঠিক হবে। নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করলে তারা ওভারটাইম পেতে পারেন। সব কর্মীই যাবে বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে। তবে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলে জানান সচিব।
চুক্তির বিষয়ে সৌদি উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদ বলেন, আমরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সব ধরনের অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করব। নিয়োগদাতা কর্মীদের থাকা খাওয়ার খরচ বহন করবে। আর তাদের দক্ষতার উপর তাদের মজুরি নির্ধারিত হবে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) এবং সৌদি আরবের জনশক্তি আমদানিকারকদের সংগঠন সৌদি ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট কমিটির (সানারকম) মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়।
এর আগে গত রবিবার দুপুরে সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল ৪ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। সৌদি আরবে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক করতে সোমবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সৌদি আরবে গৃহস্থালীর (হাউজ হোল্ড ওয়ার্কার) কাজে প্রতি মাসে বিনা খরচে ১০ হাজার কর্মী যাবে। তাদের মিনিমাম বেতন হবে ১৫শ’ রিয়েল। এর নিচে লোক পাঠাবো না-এব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের পর সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল। এর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও বাজার গুটিয়ে নিয়েছিল। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর লিডিংয়ে আছে। তাই সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও তাদের বাজার উন্মুক্ত করবে।
সৌদিতে যেতে কর্মীদের কত টাকা খরচ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমার কর্মীদের কাছ থেকে এক টাকাও নিতে দেব না। সৌদি আরবে কর্মী যেতে কোনো টাকা পয়সা লাগবে না। শুধুমাত্র পাসপোর্টসহ অভ্যন্তরীণ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার। দেশটিতে ২০ লাখের বেশী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সৌদি আরব। গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে সৌদি সরকার। ওইদিন সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক ফ্যাক্স বার্তায় জানান, সৌদি আরবের রাজকীয় সভা ওই দিন বাংলাদেশের ওপর থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এ দেশটিতে শ্রমিক পাঠাতে আর কোনো বাধা নেই।