যে ৯টি কারণে জয় পেল আম আদমি পার্টি
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আম আদমি পার্টি (এএপি)।
এই অঞ্চলের নির্বাচনে এবারই প্রথম কোনো পার্টি এতো বড় জয় পেলো। ৭০টি আসনে ৬৫টিতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মূখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে যাচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। যে কারণগুলো কেজরিওয়ালের এতো জয়ের পেছনে ভূমিকা রেখেছে, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
১. প্রথম থেকেই প্রচারণা
এএপি এবং এর জাতীয় আহ্বায়ক কেজরিওয়াল ২০১৪ সালে পদত্যাগের পর থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন এই নির্বাচনের জন্য। নির্বাচনী ইশতেহারেও এএপি অন্যান্য দলের চেয়ে এগিয়ে ছিলো। সেই সাথে প্রচারণার সময় দলটির নেতারা ভোটারদের সাথে দ্রুত যুক্ত হতে পেরেছিলো।
২. কেজরিওয়ালের ক্ষমা প্রার্থনা
প্রতিটা মানুষই একটি দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে। খুব সম্ভবত দিল্লির ভোটররা এই কথাটাই মনে রেখেছিলেন ভোট দেওয়ার সময়। এর আগের শাসনামলের অবসান ঘটিয়ে ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করাটা ছিলো একটা ভুল এবং তা বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন জনগণের কাছে কেজরিওয়াল। এই ক্ষমা প্রার্থনাই কেজরিওয়ালকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। সেই সাথে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কিরণ বেদীর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র কোনো বিষোদ্গার করেননি তিনি। তার এসব কাজ তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।
৩. মাফলারওয়ালা বনাম ১০ লাখ রুপির স্যুটওয়ালা
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের সময় নিজের নাম খোদাই করা স্যুট পরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যার দাম ১০ লাখ রুপি। অপরদিকে মাফলার পরেই সারা রাজ্য চষে বেড়িয়েছেন কেজরিওয়াল নির্বাচনী প্রচারণায়। মিডিয়ার প্রচারণা মোদির ১০ লাখের স্যুট পরিচিত হয়ে উঠলেও তা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। পক্ষান্তরে মাফলার জড়ানো কেজরিওয়াল যেন সাধারণেরই প্রতীক।
৪. মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠি সংখ্যালঘু বলে গণ্য হলেও তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। এবং এই নির্বাচনে তাদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে এএপি। গত নির্বাচনে মুসলিম জনগোষ্ঠির ভোট এএপি এবং কংগ্রেসের মাঝে বণ্টিত হলেও এবার আর তা হয়নি।
৫. কংগ্রেসের পরাজয়
এর আগের নির্বাচনে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিলো কংগ্রেস এবং এএপি’র মাঝে। কিন্তু এবার কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটেছে। আর সেই ভোটগুলো এসে যুক্ত হয়েছে এএপি’র ভাণ্ডারে।
৬. বিজেপির অবহেলা
লোকসভায় দিল্লির সাতটি আসনের সবক’টিতেই জয় পেয়েছিলো বিজেপি। আর এই জয় বিজেপিকে এতোটাই আত্মপ্রসন্নতে ভুগিয়েছে যে, যতোটা প্রচারণা দরকার ছিলো, তার কিছুই করেনি প্রথম দিকে দলটি। আর এই ফাঁকই এএপি এবং কেজরিওয়ালের জন্য সুবর্ণ সুযোগ বয়ে আনে পূণরায় উজ্জীবিত হয়ে উঠতে। যখন বিজেপি স্বক্রিয় হয়েছে, ততোদিনে কেজরিওয়ালের এএপি নেতৃত্ব নিয়ে বসে আছে।
৭. বিজেপি’র ‘বেদী’ ফেক্টরের বিফলতা
প্রথমদিকে কিরণ বেদীকে মূখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার ব্যাপারে অমিত শাহের সিদ্ধান্তকে অনেক বড় একটা মাইলফলক মনে করা হলেও আদতে তা ছিলো একটা ভুল সিদ্ধান্ত। ফলে বিজেপি’র মাঝেই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে স্থানীয় বিজেপি নেতাকর্মীরাও ছিলেন অখুশি। এরই প্রতিফল পড়েছে ভোটে।
৮. কোনো সমবর্তন নয়
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু-মুসলিম সমবর্তন কোনোই প্রভাব রাখেনি। তারওপর এএপি এধরণের কোনো প্রভাব যাতে না পড়ে, সে লক্ষ্যেই কাজ করে গেছে।
৯. এটি ‘মোদি’ সংক্রান্ত নয়
সত্যি বলতে কি, এই নির্বাচন মোদি সংক্রান্ত ছিলো না। এটি নিতান্তই একটি রাজ্য নির্বাচন এবং এখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়, ফ্যাক্টর ছিলেন সাবেক মূখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। তারওপর গত জাতীয় নির্বাচনে লোকসভায় প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় দিল্লির জনতা বিজেপিকেই পছন্দ করেছে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া