বিশ্রামরত পুলিশকেও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
অবরোধ ও হরতাল ডিউটিতে নিয়োজিত স্পেশাল আমর্ড ফোর্স (এসএএফ) ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) ফোর্স বাদে বিশ্রামরত সকল ফোর্সকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং পিওএম বিভাগে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
অবরোধ ও হরতাল চলাকালে জরুরী প্রয়োজন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ১১ জানুয়ারি এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ঢাকার বাইরের আন্দোলন কিছুটা চাঙ্গা করতে পারলেও ঢাকায় তারা বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। তবে এবার ঢাকাকে টার্গেট করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট মাঠে নামছে। দলটির নেতাকর্মীরা যাতে বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না করতে পারে সে লক্ষ্যেই বিশেষ এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সহিংসতা ও নাশকতা মোকবেলায় ঢাকা মহানগরকে ৯টি সেক্টরে ভাগ করে জয়েন্ট কমিশনার পদের কর্মকর্তাদের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির কর্মপরিকল্পনা অনুসারে হরতাল-অবরোধে ঢাকা মহানগরীর ৯টি এলাকায় প্রতিদিন ৯০ প্লাটুন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এদের মধ্যে ওয়ারীতে ৮ প্লাটুন, লালবাগে ৮, রমনায় ১২, মতিঝিলে ১৫, মিরপুরে ১০, তেজগাঁওয়ে ৮, গুলশানে ১২ ও উত্তরায় ৫ প্লাটুন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুলিশ কন্ট্রোলরুমে আরও ১২ প্লাটুন পুলিশ সদস্য মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে। এ ছাড়া সচিবালয় এলাকায়ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখবে ডিএমপি। এলাকাগুলো ডিএমপির চারজন জয়েন্ট কমিশনার তদারকি করবেন। এদের মধ্যে ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন, ট্রাফিক, লজিস্টিক, ফিন্যান্স এ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট এবং ডিবি পুলিশের একজন করে কর্মকর্তা রয়েছেন।
ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়— ডিসি, সদর দফতর ও প্রশাসন এবং পিওএম (উত্তর/দক্ষিণ), ডিএমপি জরুরী পরিস্থিতিতে চাহিদা মোতাবেক ফোর্স পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ ছাড়া হরতাল চলাকালীন কোনো নাশকতা দৃষ্টিগোচর হলে তা উপ-পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) জানাতে ডিউটিতে নিয়োজিত অফিসার ও ফোর্স এবং ডিউটি বাদে অন্যান্য ইউনিটের অফিসার ও ফোর্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়— হরতাল-অবরোধের আগের দিনে সমর্থনকারীরা শোডাউন করার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করতে হবে। হরতাল-অবরোধে বেআইনী কার্যকলাপে জিরো টলারেন্স দেখতে হবে। এ ছাড়া দৃষ্কৃতকারীরা কোনো যানবাহন যাতে পুড়িয়ে দিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে ভিআইপি রোড, হাইওয়ে ও কূটনৈতিক জোনে কোনোপ্রকার মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে হরতাল-অবরোধে মাত্রাতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছেন। অন্য সময় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হলেও এখন তাদের সময় দিতে হচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা। পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হরতাল-অবরোধে দায়িত্ব কম থাকলেও এর নিচের পদের কর্মকর্তা ও সদস্যের আগের তুলনায় বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
প্রেস ক্লাব এলাকায় মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ সদস্য আবুল হোসেন শিকদারসহ অন্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
আবুল হোসেন জানান, ভোর ৪টা থেকে তিনি দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। একটানা রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত ডিউটি চলবে। রাতে ব্যারাকে গিয়ে ঘুমাতে না ঘুমাতেই আবারও ডিউটির জন্য বের হতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-পরির্দশক (এসআই) পদের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে প্রায় সব সময়ই দায়িত্বে থাকতে হয়। ঘুমানোর সময়ও মোবাইল কাছে রাখতে হয় যাতে নির্দেশ এলেই আবার বেরিয়ে পড়তে পারি।’
মানসিকভাবে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সহিংতা প্রতিরোধে ঢাকা মহানগরীর পুলিশের যেমন দায়িত্ব পালন করতে হয়, তেমনি পুলিশ সদস্যকে বিশ্রামের জন্য সময় দেওয়া হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্রামেও কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে বিশ্রামরত সদস্যদেরও এগিয়ে আসার প্রস্তুতি নিতে হবে।’