আশরাফুলের চোখে ১৫ ক্রিকেটযোদ্ধা
বিশ্বকাপ মঞ্চে দ্যুতি ছড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশের ১৫ ক্রিকেটযোদ্ধা। ২ দিন পরে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট মহোৎসব। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হয়ে লড়াইয়ে মাঠে নামবেন সাকিব-তামিম-মাশরাফিরা। কেমন করবেন তারা; এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। কী বলেছেন ১৫ ক্রিকেটযোদ্ধা নিয়ে; জেনে নিন তার জবানী থেকেই-
মাশরাফি বিন মর্তুজা : দলকে লিড দেওয়ার মতো পুরোপুরি দক্ষ মাশরাফি। গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে দলে ছিল না। এবার অধিনায়ক হয়েই বিশ্বকাপ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সব সময় মাশরাফি শতভাগ উজাড় করে খেলেন। ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ মাশরাফিকে তার যথাযথ মযার্দা দেওয়ার জন্য। মাশরাফি এর যোগ্য। বাংলাদেশের জন্য যা করেছেন মাশরাফি ফলে তার কাছে প্রত্যাশা করতেই পারে। ওর সবচেয়ে বড় যোগ্যতা মাশরাফি ভাল দলনেতা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে সব সময় প্রস্তুত থাকে মাশরাফি। তার বোলিংয়েই বোঝা যাবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। নতুন বলে ভাল একটা শুরু এনে দিলে বাংলাদেশের দলের জন্যই ভাল হবে।
তামিম ইকবাল : বাংলাদেশের সবচেয়ে ট্যালেন্ট ওপেনারদের মধ্যে একজন। ওর মধ্যে বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা আছে। তামিমের ওপরই বাংলাদেশের বড় ইনিংস নির্ভর করবে। ইনজুরি থেকে ফিরে এরই মধ্যে ফর্মে ফিরেছে তামিম। আমার বিশ্বাস এই টুর্নামেন্টে তামিম ভাল কিছু করবে।
মুশফিকুর রহিম : গত বছরের টপ স্কোরার ছিল মুশফিক। মুশফিক অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকেই ভাল ক্রিকেট খেলছে সব ফরম্যাটেই। দুর্ভাগ্যক্রমে বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বটা করার সুযোগ পেল না। কিন্তু এটা কোনো সমস্যাই হবে না। মুশফিক বাইরে-ভেতরে সব জায়গায় খুব হেল্পফুল। জুনিয়র ক্রিকেটারদের সবাই মুশফিকের কাছ থেকে সাহায্য পায়। খুবই ভাল ছেলে। ওর থেকে পারফরম্যান্সটা আশা করি বিশ্বকাপে। এখন সবচেয়ে নিখুঁত টেকনিক যদি বলা হয় তবে মুশফিককেই এগিয়ে রাখতে হবে। ওই ধরনের কন্ডিশনে স্ট্রোক মেকার করার ক্ষমতাটা বেশি থাকতে হয়। মুশফিক সাইড স্ট্রোক বেশি খেলতে পারে। আশা করব মুশফিক তার সেরা খেলাটাই খেলবে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : দলে ঢোকার পর থেকে সব সময় ৭-৮ নম্বরে ব্যাটিং করত। গত সিরিজ থেকে রিয়াদ সুযোগ পাচ্ছে উপরে ব্যাটিং করার। ৪ নম্বরে ব্যাটিং করে রিয়াদ ভাল কিছু ইনিংস খেলেছে। আমি আশা করব, রিয়াদ তার স্বাভাবিক খেলাটা বিশ্বকাপে খেলবে। এতে ওর (রিয়াদ) জন্য যেমন ভাল হবে, তেমনি আমাদের জন্যও ভাল হবে। ওর পজিশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাকিব আল হাসান : সাকিব সম্পর্কে বলার কিছুই নেই। নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার ওয়ানডে-টেস্ট-টোয়েন্টি২০ ক্রিকেটে। দলে আসার পর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে সাকিব কোন ক্লাসের খেলোয়াড়। আমাদের বাংলাদেশে ওই মানের খেলোয়াড় আসলে এখনো আসেনি। বিশ্বকাপে সাকিবের দিকে তাকিয়ে থাকবে ক্রিকেটভক্তরা।
নাসির হোসেন : দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই অসাধারণ খেলে চলছিল নাসির। তাকে ফিনিশার বলা হচ্ছিল। গত ৭-৮ মাস ধরে হয়ত ব্যাট হাতে সেরাটা দিতে পারেনি। অফ ফর্মে ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৫০ গড়ে সাড়ে পাঁচশ’ রান করে আবার সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। ওর শুরুতে যে নামটা ছিল ফিনিশার; আমি আশা করব বিশ্বকাপে এই নামটা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে নাসির। অবশ্য নাসির যে পজিশনে ব্যাটিং করে ওই জায়গাটায় নিজের জন্য ব্যাটিং করা কঠিন। তবে নাসির কখনই নিজের জন্য খেলে নাই, আমি যতটুকু দেখেছি। আমি আশা করব, নাসির দলের জন্যই খেলুক এবং ফিনিশার হয়ে ফিরে আসুক।
এনামুল হক বিজয় : এনামুলের টেকনিক বেশ ভাল। ওর মধ্যেও বড় ইনিংস খেলার সক্ষমতা আছে। এনামুল সেট হওয়ার পর বড় ইনিংস খেলে।
মুমিনুল হক : মুমিনুল নিজেকে প্রমাণ করেছে ও (মুমিনুল) অনেক বড় খেলোয়াড়। যদিও ওয়ানডে ক্রিকেটে ওভাবে মুমিনুল সুযোগ পায়নি। সেভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেনি। অবশ্য অনেক ছোট ক্যারিয়ার। যদিও টেস্টে এই ছোট ক্যারিয়ারে নিজেকে প্রমাণ করেছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে মুমিনুলকে সময় দিলে হয়ত ওয়ানডেতেও ভাল খেলোয়াড় হবে।
সাব্বির রহমান রুম্মন : রুম্মন বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলে আসছে। এছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটাও ভাল হয়েছে তার। হয়ত এ কারণেই বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়েছে। আমার কাছে মনে হয় এবারের বিশ্বকাপে সাব্বিরের ভাল সুযোগ আছে ক্রিকেট মঞ্চে কিছু দেখানোর। ওই পজিশনে যদি কম বলে বেশি রান করতে পারে এ জিনিসটা ফলো করবে মানুষ বেশি এবং তারকা হওয়ার পুরো সুযোগটা লুফে নেবে সাব্বির।
সৌম্য সরকার : সৌম্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলার পুরস্কার স্বরূপই এখানে সুযোগ পেয়েছে। শেষ কয়েকটা সিজন তার ধারাবাহিক গেছে ব্যাট ও বল হাতে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন বিবেচনায় করেই পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্রিসবেনের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে সৌম্য ভাল খেলেছে। সৌম্য নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
তাসকিন আহমেদ : তাসকিন তরুণ খেলোয়াড়। উচ্চতা আছে, ফিগার ভাল। জোরে বল করে। আমি বলব লাইন লেন্থ ঠিক করে যদি বোলিং করতে পারে তাহলে ও বিশ্বকাপের আরেকজন তারকা হতে পারে। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছে। এটা বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। এখানে যদি ভাল করতে পারে ওর জন্য আরও সহজ হবে তারকা হওয়াটা।
রুবেল হোসেন : রুবেল অভিজ্ঞ বোলার। দলে অনেক দিন ধরে খেলছে। আমি আশা করব রুবেলও ভাল করবে।
আল আমিন হোসেন : আল আমিন খুব ভাল বোলার। হয়ত গত সিরিজটা তার ভাল যায়নি। তবে আমার বিশ্বাস বিশ্বকাপ মঞ্চে আল আমিন আলো ছড়াবে। কেননা আমর মনে হয়েছে ওর মধ্যে ক্ষুধার্ত একটা মনোভাব আছে। লাইন লেন্থগুলো বজায় রেখে বল করলে আল আমিনেরও সুযোগ থাকছে ক্রিকেট মঞ্চে ভাল কিছু করার।
তাইজুল ইসলাম : তাইজুল নতুন ক্রিকেটার বাঁহাতি স্পিনার। চমৎকার অভিষেক হয়েছে তার, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেই। দুটি অনুশীলন ম্যাচে হয়ত ভাল হয়নি। তার পরও আমি বলব যখনই সুযোগ পাবে ও ভাল করার চেস্টা করবে।
আরাফাত সানি : আমারা ঘরোয়া ক্রিকেটে একসঙ্গে খেলেছি। অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে শুরু করে। ১৩ বছর পর সুযোগ এসেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলার। আরাফাত প্রচুর মানসিকভাবে শক্তিশালী বলে এ জায়গায় সুযোগ পেয়েছে। আশা করব আরাফাত আসল ম্যাচগুলোতে ভাল করবে।