কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে রবিবার
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় রবিবার প্রকাশ হতে পারে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কামারুজ্জামানের আপিলে বিভক্ত রায় দেওয়া বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বৃহস্পতিবার তার মতামত লিখে খসড়া কপি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন।
এখন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার বিভক্ত রায়টি প্রধান বিচারপতি অনুমোদন করার পর কামারুজ্জামানের রায় দেওয়া ৪ বিচারপতি সম্পূর্ণ রায়টি পড়ে দেখবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে চারজন বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করবেন। তারপর সেটি সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
নিয়মানুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামান ১৫ দিন সময় পাবেন রিভিউ করার জন্য। যদি এই সময়ের মধ্যে কামারুজ্জামান রিভিউ করেন, তাহলে রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পরপরই রায় কার্যকর করতে পারবে সরকার।
আর তিনি যদি রিভিউ নাও করেন, তবুও সরকারকে রায় কার্যকর করতে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে আপিল বিভাগ বলেছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লার রিভিউয়ের আবেদনের রায়ে এ সব কথা উল্লেখ করেছেন আপিল বিভাগ।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, আপিল বিভাগ রুলসে রিভিউ দায়েরের ক্ষেত্রে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের অধীনে রায়ের রিভিউর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে ১৫ দিনের সময়সীমা অনুসরণ করতে হবে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হবে।
রায়ে আদালত বলেছেন, আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যু পরোয়ানা জারির আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ দিবেন। একই সঙ্গে তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। যদি কোনো রিভিউ অথবা প্রাণভিক্ষার আবেদন দায়ের করা হয় ওই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
রিভিউয়ের রায় অনুযায়ী, কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আনুমানিক ২০-২৫ দিন পর তা কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ৩ নভেম্বর তৎকালীন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ও বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন— বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সোহাগপুরে গণহত্যার দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বিভক্ত রায় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
একই সঙ্গে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। সব বিচারপতির সর্বসম্মতিক্রমে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন কামারুজ্জামান। আপিলে ২৫৬৪টি মূল ডকুমেন্ট, ১২৪টি গ্রাউন্ডসহ সর্বমোট ১০৫ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া বাকি দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই কামারুজ্জামানকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। একই বছর ২ আগস্ট তাকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।