টানা অবরোধে সুপ্রীম কোর্টের কার্যক্রম ব্যাহত
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে সুপ্রীম কোর্টের বিচার কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আদালতে আইনজীবীদের-বিচারপ্রার্থীদের অনুপস্থিতি ও বেশীরভাগ বিচারক আদালতের এজলাসে না বসায় মামলার শুনানী হচ্ছে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে যেমন মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে, অপরদিকে বিচারপ্রার্থীরা নানামুখী হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে আইনজীবীদের উপার্জনও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট কর্মদিবসে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কজলিস্টে মোট ৩৩ হাজার ৯৩৫টি মামলা শুনানীর জন্য ছিল। কজলিস্টের বিপরীতে এই ৮ দিনে মোট শুনানী হয়েছে ১ হাজার ৩৭৬টি মামলার।
এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের কজলিস্টে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২৩৫টি মামলা থাকলেও শুনানী হয়েছে মাত্র ৪৪০টি মামলার। আর সর্বনিম্ন হিসেবে গত ২৬ জানুয়ারি ৩ হাজার ১৯৬টির মধ্যে মাত্র ৩৮টি মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সে হিসাবে গত ৩০ দিনের অবরোধের মোট ২২ কর্মদিবসে প্রায় ৯৩ হাজার মামলা শুনানীর জন্য হাইকোর্টের কজলিস্টে আসলেও সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সুপ্রীম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে।
একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের কজলিস্টে দেখা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগের ৪৯টি বেঞ্চের মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ৭-১০টি বেঞ্চের মামলার সংখ্যা উল্লেখ করা নেই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টানা অবরোধ ও হরতালের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিদিন গড়ে ৫-১২টি বেঞ্চ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যদিও এ সকল বেঞ্চের মামলাগুলো শুনানী করতে পারেনি আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে।
অপরদিকে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা শুনানীর সংখ্যা হাইকোর্ট বিভাগের চেয়ে তুলনামূলক ভাল। গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ কার্যদিবসে আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির আদালতে কজলিস্টে আসা মোট ২ হাজার ২১২টি মামলার বিপরীতে ৩৩৬টি মামলার শুনানী হয়েছে।
আপিল বিভাগের ২ নম্বর আদালতের কজলিস্টে আসা ৫৫৪টি মামলার বিপরীতে ২০৬টি মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উচ্চ আদালতে মামলার শুনানী সময় মতো না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের সাথে সাথে আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা এক বিচারপ্রার্থী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অনেক কষ্টে বহু টাকা খরচ করে হাইকোর্টে এসেছি মামলার রায় শুনতে। কিন্তু উকিল আমাকে বলল, কোর্ট বসবে না। তাই কোর্টের মধ্যে (আদালত প্রাঙ্গণ) বসে আছি।’ পরবর্তী সময়ে রায় কবে হবে তাও তিনি জানেন না।
রায় হবে না জানার পরও আদালতে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘যাওয়ার তো কোনো জায়গা নেই। রাতে ট্রেন আছে, দিনে তো ট্রেন নেই। তাই আদালতে অপেক্ষা করছি। বিকেলের দিকে এখান থেকে রেল স্টেশনে যাব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে মানুষের চরম মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের দুর্দশার সীমা নেই। আইনজীবীদের জীবন-জীবিকা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মামলার শুনানী হচ্ছে না। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।’
পৃথিবীর কোনো দেশে এমন আন্দোলন হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন আন্দোলন কখনই সফল হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার সূত্রে সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমরা ঠিক মতো আদালতে আসতে পারি না। আর এসেও লাভ হয় না। কারণ বিচারপ্রার্থীরা না আসলে আমাদের আয়-উপার্জন হয় না। মামলার শুনানী করতে না পারায় পকেটের অবস্থা বেশী ভাল না।’ রাজনৈতিক কারণে আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সাধারণ আইনজীবীরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।