রাজধানীতে হরতালের প্রভাব নেই, আছে আতঙ্ক
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি চলতি সপ্তাহের ৫ দিনই কেটেছে হরতালে। হরতাল চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও হরতালে যানবাহন চলাচলে তেমন প্রভাব পড়েনি। রাজধানীতে যান চলাচল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুই অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।
রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতায় নাশকতার সময় বেশ কয়েকজন দুর্বৃত্ত আটকও হয়েছে। তবে হরতালের প্রভাব না থাকলেও মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। কর্মের তাগিদে বাইরে বেরুলেও নাশকতার আশঙ্কায় শঙ্কিত রয়েছেন ঢাকাবাসী। রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ ৫ দিনে রাজধানীর হরতাল চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী, গুলশান, শাহবাগ, সচিবালয়, হাইকোর্ট ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নাশকতার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়া র্যাব ও পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শিক্ষার্থী, রিকশাচালকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ককটেল বিস্ফোরণের সময় ও পুলিশের অভিযানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি সমর্থিত ৬২ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান অব্যাহত আছে। রাজধানীতে মোতায়েন করা হয় ১৬ প্লাটুন বিজিবি।
এদিকে ঢাকার সাথে বাইরের জেলাগুলোর যোগাযোগ কম থাকলেও সপ্তাহজুড়েই রাজধানীর যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। হরতালেও ঢাকার সড়কপথে যানজট দেখা গেছে। শপিংমল, ফুটপাত, মার্কেট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক। তবে কর্মব্যস্ত মানুষ হরতাল উপেক্ষা করে কর্মস্থলে এলেও নাশকতার আতঙ্ক ছিল প্রত্যেকের মধ্যেই।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নুরুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘বাসে করে অফিসে আসছিলাম। কর্মব্যস্ত অনেকেই বাসে থাকলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছিল। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ বাসে যাতায়াত করলেও নাশকতার আশঙ্কায় বাসের জানালাগুলো বন্ধ করে রেখেছিল। প্রতিদিন এভাবেই আতঙ্ক নিয়ে অফিসে যাতায়াত করছি।’
এদিকে হরতালে রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি রাস্তায়ই মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ। পুরান ঢাকার রিকশাচালক ফকির আলী বলেন, ‘কয়দিন আর বসে থাকা যায়? ভয় হলেও টাকার জন্য রিকশা চালাতে হয়। প্রতি মুহূর্তেই আতঙ্ক কাজ করে, কখন কি হয়। তাই পুলিশ দেখে রিকশা থামাই। অন্তত পুলিশের সামনে কেউ ককটেল মারবে না।’
এদিকে স্কুল-প্রতিষ্ঠানগুলোতে হরতালের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা অনিয়মিত হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে এলেও আতঙ্কের মধ্যেই তাদের যাতায়াত করতে হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামী সরকার বলেন, ‘ক্লাস হয়, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হয়। কিন্তু বাইরে বেরুতে ভয় হয়। যেভাবে পেট্রোলবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে তাতে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি।’
এ ছাড়া হরতাল-অবরোধেও রাজধানীর কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কেনাবেচা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। রাজধানীর শ্যামবাজারের সবজি বিক্রেতা আক্তার হোসেন বলেন, ‘রাতে ট্রাকে করে তো সব ধরনের মালামালই ঢাকায় চলে আসে। তবে অনেক ড্রাইভার নাশকতার ভয়ে রাস্তায় বেরোয় না। ফলে ট্রাক ড্রাইভারদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।’
এদিকে জানুয়ারি মাসে হরতালের কারণে ভয়ে ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি কম থাকলেও চলতি সপ্তাহে তা স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছে। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ী আজমল মিয়া বলেন, ‘প্রথম প্রথম হরতাল শুরু হলে ভয় হতো। কারণ কিছু হলে তো সব পুঁজি শেষ হয়ে যাবে। আর নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশও ফুটপাতে বসতে দিত না। কিন্তু এখন আর সে ধরনের সমস্যা নাই।’