শিগগিরই মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি, বাদ পড়ছেন আজিজ–মায়া
দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকা সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন।
আসছে নতুন নেতৃত্ব। শিগগিরই ঘোষণা করা হবে নতুন কমিটি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই ভাগ করার ব্যাপারেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার দেওয়া তথ্যমতে, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন মরহুম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের একমাত্র পুত্র সাঈদ খোকন। দক্ষিণের কমিটি চূড়ান্ত হলেও উত্তরের কমিটিতে দুই-চারজনকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের তথ্যমতে, উত্তরের চারজনের মধ্যে রয়েছেন- সভাপতি হিসেবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি। বিকল্প আর একটি হল সভাপতি হিসেবে দলীয় সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্যাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। উত্তরের রাজনৈতিক নানাবিধ দুর্বলতার কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগের সমর্থন রয়েছে কামাল ও কচির প্রতি। সেদিক থেকে উত্তর আওয়ামী লীগের কমিটির জন্য কামাল-কচি এগিয়ে রয়েছেন।
তবে মহানগর দুই ভাগ ও নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের খবর পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও উত্তরা অভিজাত এ সব এলাকা নিয়ে মহানগর উত্তর। এ সব এলাকায় বসবাস অভিজাত শ্রেণীর মানুষের। ফলে এ সব এলাকার কর্মী-সমর্থক ও নেতারা সবাই রাজনীতি সচেতন হলেও সবসময়ের জন্য অলস প্রকৃতির। রাজনৈতিক মিছিল, সমাবেশের ক্ষেত্রে লোক সমাগম ঘটানোর দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ সব এলাকা। ফলে উত্তর আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে এ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, নগর আওয়ামী লীগ অবিভক্ত থাকার ফলে দক্ষিণ ভাগের রাজনৈতিক অতি তৎপরতা থাকায় উত্তরের দুর্বলতাটুকু কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। বিরাট এ দুর্বলতা তেমন চোখে পড়েনি। কিন্তু দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পর উত্তরের রাজনীতি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপরদিকে দক্ষিণ ভাগের রাজনীতি নিয়ে বাড়তি এ সব চিন্তা নেই তাদের মধ্যে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, এমন একটি কথা শুনেছি। তিনি বলেন, তবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে এখনো বসেননি।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, এগুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কথা হয়নি। তিনি বলেন, আপনাদের লেখার কিছু নেই তাই এ বিষয়কে সামনে আনছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলো নিয়ে ভাবার সময় কি আছে?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নগর আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বলেন, কমিটি চূড়ান্ত। যে কোনো সময়ে ঘোষণা করা হবে। নগর আওয়ামী লীগ দুই ভাগের কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। সম্প্রতি দলের একটি বৈঠক শেষে দ্য রিপোর্টের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপে এ কথা বলেন আশরাফ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খুব শিগগিরই বিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগের গত কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এদিকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে নগর আওয়ামী লীগকে অবিভক্ত রাখার পক্ষে আজিজ-মায়ার সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যর্থ হল। নগরের রাজনীতিতে আজিজ-মায়ার দলাদলি থাকলেও অবিভক্ত নগর আওয়ামী লীগের পক্ষে ভেতরে ভেতরে এক হয়ে লড়াই করেছেন তারা। সূত্রমতে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে ভাগ করতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে।