পদ্মায় লঞ্চডুবি : ৬৯ লাশ উদ্ধার, অভিযান সমাপ্ত
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার মাঝামাঝি পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস সোমবার বেলা ১১টায় এ ঘোষণা দেন।
লঞ্চডুবির ওই ঘটনায় সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১১ শিশুসহ ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ লাশ শনাক্ত হয়েছে, ১২টি হয়নি। পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস উদ্ধারকাজ সমাপ্তের ঘোষণা দেওয়ার সময় বলেন, এ পর্যন্ত ৬৯ লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ১২টি শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত না হওয়া লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে কিছুদিন খোঁজ করার কাজ অব্যাহত রাখবে ডুবুরিরা। প্রয়োজন হলে অন্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এর আগে রবিবার রাত ১টা পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারকারী জাহাজ টেনে তুললে লঞ্চের ভেতর ২৪ লাশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫ জন শিশু ছিল। তবে তাদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
রবিবার দুপুর পৌনে ১২টায় এমভি নারগিস নামে সারবাহী একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় ‘এমভি মোস্তফা’ নামের ওই লঞ্চটি।
লঞ্চটিতে শতাধিক যাত্রী ছিল বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে ৫০-৬০ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ৬৭ লাশের মধ্যে ২৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন—মাগুরার লাইলী আক্তার (৬৫), রাজবাড়ীর ইমরান (৮), নবীজান (৭০), রাবেয়া বেগম (৫০), নাসিমা আক্তার (৩৬), ইমামুল ইসলাম (১৫), অসীমা রাণী (৪০) ও ফারজানা আক্তার (৩০); পাবনার ফজলুর রহমান খান (৫৫); মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের সেলিম হোসেন (২৮), লাবনী আক্তারমুক্তা (১৫); কুষ্টিয়ার নাসিরউদ্দিন (৪০), মধুসূধন সাহা, রেবেকা খাতুন (৫০) ও মেহেদী হাসান (৩০); কুমারখালী, কুষ্টিয়ার সাবু (২০) ও বিথী খাতুন (৩৫); ফরিদপুরের নার্গিস আক্তার (১৫), পাপন (০৫), রতন কুমার সরকার (৩২) ও অর্চনা মালো (৪৫); নগরকান্দা, ফরিদপুরের বাধন সরকার (৮), শিবালয়, মানিকগঞ্জের লতা আক্তার (২২), নড়াইলের হাফছা (৮) ও আমেনা বেগম (৩০), গোপালগঞ্জের জুনায়েদ শেখ, এবং কুমিল্লার আবুল হাসান (৬০) ও পরিমল ভৌমিক।
উদ্ধার হওয়া লাশগুলো পাটুরিয়া ঘাটে নেওয়া হচ্ছে। স্বজনদের কন্টোলরুমে যোগাযোগ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল মুকতাদির জানান, এমভি নারগিস নামে সারবাহী একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি মাঝ পদ্মায় ডুবে যায়। যাত্রীদের উদ্ধারে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও উদ্ধারকারী জাহাজ (আইটি-৮৩৮৯) কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৫০-৬০ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা সাঁতরে তীরে উঠেছেন। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি শনাক্ত করে তার চারদিকে ছোট নৌকা ও রশি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উদ্ধার করার পর এক শিশুকে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়।
শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টি এস কেএম তারিকুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় এক শিশুকে আনার কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জের ঘিওর ফায়ার সার্ভিস অফিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর জিহাদ মিয়া জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ৩৫-৪০ ফুট গভীরে রয়েছে। লঞ্চের সামনের দিকটা রয়েছে নিচের দিকে।
দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ থেকে সাঁতরে উদ্ধার পাওয়া যাত্রী বিমল চন্দ্র মণ্ডল, তাপস কুমার দাস ও তার বন্ধু আখতার মোল্লা জানান, এমভি মোস্তফা লঞ্চে করে তারা ফরিদপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। মাঝ নদীতে পৌঁছানোর পর বাম দিক থেকে এসে কার্গো জাহাজটি তাদের লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। এতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডান দিকে কাত হয়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটিতে শতাধিক যাত্রী ছিল বলেও জানান তারা।