জনপ্রশাসনে দায়বদ্ধতা বাড়াতে এপিএমএস ব্যবস্থা
প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের জনপ্রশাসনের দায়বদ্ধতা বাড়াতে নতুন ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। সংস্কারের অংশ হিসেবে এ্যানুয়েল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এপিএমএস-সরকারি কর্মসম্পাদনা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি) আওতায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবের এ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট (এপিএ) হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রশাসনিকভাবে এই নতুন যুগের সূচনা হল।
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে যে প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় তারই ধারাবাহিকতা শুরু করেছি আমরা। আশা করি সামনের দিনে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নতুন ধারা দেখতে পারবেন।
মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, এপিএমএস হল পুরো প্রক্রিয়াটির ব্যবস্থাপনাগত দিক। আর এপিএ হল মূল কাজ। এ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্টের (এপিএ) মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব তার মন্ত্রীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট দফতর এক বছরে কি কি কাজ করবে সেটির একটি চুক্তি করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি এবং এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে এ সব চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
এই চুক্তির আলোকে ছয়মাস পর একটি মধ্যমেয়াদী মূল্যায়ন এবং একবছর পর চূড়ান্ত মূল্যায়ন হবে। এক বছর মেয়াদী এই চুক্তির বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে। ফলে একটি মন্ত্রণালয় ওই বছর কি কি বিষয়ে কাজ করছে তা জানতে পারবেন সবাই। সেই সঙ্গে কোন প্রকল্পের কি অবস্থা তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
এর মাধ্যমে সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনের দক্ষতা, দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রকল্প চলাকালে কার্যক্রম মূল্যায়ন সহজ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনপ্রশাসনের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্কারের নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) ও প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গত ছয়মাসেরও বেশী সময় ধরে আমরা কাজ করছি। আজ দশটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার মধ্যদিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করলাম। পর্যায়ক্রমে বাকি মন্ত্রণালয়গুলোর চুক্তি সাক্ষরিত হবে।’
এক বছরের কাজের চুক্তির বিষয়গুলো কীভাবে নির্ধারিত হবে? জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব পাঠাবে প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির কাছে। এই কমিটি তাদের মতামত দিয়ে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এরপর মন্ত্রণালয় তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে থাকা ‘সরকারি কর্ম সম্পাদনা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির’ জাতীয় কমিটিতে পাঠাবে। তারপর জাতীয় কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে বাৎসরিক চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
প্রশাসনিক সংস্কারের এই সূচনায় যে দশটি মন্ত্রণালয় প্রথম এ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট (এপিএ) সাক্ষর করেছে সেগুলো হল- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রথমদিকে প্রশাসনিক এই সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যাতে সমস্যায় না পড়ে তার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তিন থেকে পাঁচজন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক এই সংস্কারের ক্ষেত্রে ভারত, ভুটান, কেনিয়া, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রশাসনের কর্ম সম্পাদন প্রক্রিয়া মূল্যায়ন করে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই সংস্কারের ফলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যক্তিগত ধারণার পরিবর্তে বার্ষিক কাজের যোগ্যতার মানদণ্ডে গোপনীয় প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।