‘বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি’
দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন; কিন্তু বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দলে সুযোগ হয়নি তার। পেসার শফিউল ইসলাম তাই হতাশ হয়েছিলেন। তাই বলে বিশ্বকাপের মঞ্চে দলের শুভ কামনা করতে আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিল না তার। এই তো কিছুদিন আগে শফিউল ইসলাম দ্য রিপোর্টে সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তার দলের জন্য শুভকামনা জানিয়েছিলেন। বিস্ময়কর বিষয় হল, কেবল শুভকামনাই নয়, এবারে বিশ্বকাপের মঞ্চে জাতীয় দলের সাফল্যের দায়িত্বও ঘাড়ে বর্তেছে তার। কেননা, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে পেসার আল আমিনকে দেশে ফিরতে হচ্ছে। আর তার জায়গায় বাংলাদেশ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যোগ দিচ্ছেন শফিউল ইসলাম। তিনি সেই শফিউল, যিনি ২০১১ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ জিততে ভূমিকা রেখেছিলেন। আবার সেই আসরেই ইংল্যান্ডে বিপক্ষে ব্যাট ও বল হাতে অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করে দলকে জিতিয়েছেন।
সোমবার রাত ৯টায় মেলবোর্নের উদ্দেশে বিমান ধরবেন তিনি। দেশ ছাড়ার আগে দ্য রিপোর্টকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শফিউল; জানিয়েছেন, এভাবে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ায় দারুণ খুশি তিনি। সঙ্গে অবাকও হয়েছেন। তবে বিশ্বকাপে মাঠে নামার সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শফিউল-
প্রশ্ন : একদিন আগে বিশ্বকাপে দলের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন, এবার নিজেই ওই দলের সদস্য হয়ে গেলেন; ২/৩ দিনের মধ্যে এমন পরিবর্তন কতটা অবাক হয়েছেন?
শফিউল : অবাক তো হয়েছি। বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি আমার। দলে না থাকলেও সব সময়ই প্রত্যাশা থাকে, দল ভাল কিছু করবে। এবার নিজেই সদস্য হয়েছি বিশ্বকাপ দলে। আমার ওপর দায়িত্ব এসেছে; চেষ্টা থাকবে মূল একাদশে সুযোগ পেলে নিজের দায়িত্বটা শতভাগ পালন করার।
প্রশ্ন : ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও মাশরাফি বিন মর্তুজার ইনজুরির কারণে বদলি খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছিলেন আপনি। এবারও আল আমিনের এমন ঘটনার কারণে সুযোগ মিলেছে; কি মনে হয়, নিয়তি কি এভাবেই আপনার বিশ্বকাপ ভাগ্য লিখে রেখেছে?
শফিউল : দেখুন, এটা তো আমার হাতে নেই। প্রথমবার মাশরাফি ভাই খেলতে না পাড়ায় সুযোগ পেয়েছি। এবার এমনই হয়েছে, আল আমিনের পরিবর্তে সুযোগ এসেছে। আসলে আমি কিভাবে সুযোগ পাচ্ছি তা নিয়ে ভাবছি না। আমার কাজ হল পারফর্ম করা। আর এটা করতে পারলেই আমি ভাববো আমি সফল হয়েছি। কোন প্রক্রিয়া সুযোগ পেলাম, এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার কিছু নেই।
প্রশ্ন : আপনি বলেছিলেন বিশ্বকাপের খেলাটা মিস করেছেন। এবার তো পূরণ হল সেই স্বপ্ন। কেমন লাগছে?
শফিউল : যারা জাতীয় দলে খেলে, সবারই প্রত্যাশা থাকে বিশ্বকাপে খেলার। আমি জাতীয় দলের খেলোয়াড়। আমার ইচ্ছাটাও ছিল এমনই। তবে সুযোগ না পেয়ে কিছুটা হতাশ তো হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দলের সদস্য আমি। ভাবতে ভালই লাগছে। বিশ্বকাপের মতো এতো বড় একটা ইভেন্টে সুযোগ পাওয়াটা সব সমই অন্য রকম বিষয়। গত বিশ্বকাপে আমি যেমন পারফরম্যান্স করেছিলাম, এবার মাঠে নামার সুযোগ পেলে তেমন কিছুই করতে চাই।
প্রশ্ন : যখন শুনলেন বিশ্বকাপের মতো এতো বড় একটা ইভেন্টে যাচ্ছেন, কেমন অনুভূতি হচ্ছিল তখন?
শফিউল : রবিবার জাতীয় ক্রিকেট খেলার জন্য আমি বিকেএসপিতে ছিলাম। সেখানেই প্রথম জানতে পারি বিষয়টা। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার সাব্বির খান আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। এ জন্য আমাকে বিকেএসপি ছেড়ে বাসায় ফিরে আসতে বলেন তিনি। বিষয়টি শোনার পর আমাকে অন্যরকম একটা অনুভূতি নাড়া দিয়েছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমি একটা ঘোরের মধ্যেই আছি। খুব দ্রুত আমাকে সব কিছু গোছ গাছ করতে হচ্ছে। অনুভূতিটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপ যাচ্ছেন; কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন?
শফিউল : অবশ্যই ভাল কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছি। দেশের জন্য খেলতে যাচ্ছি, চেষ্টা থাকবে নিজের সেরাটা দেওয়ার। আর এটা করতে পারলে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হয়তো রাখতে পারব। যদি বিশ্বকাপে মূল একাদশে সুযোগ হয়, তবে প্রত্যাশা করছি যে গত বিশ্বকাপের মতো এবারও কিছু পারফরম্যান্স করে দেখাতে পারব।
প্রশ্ন : বিশেষ কোনো লক্ষ্য আছে কিনা- যেমন বিশেষ কোনো ব্যাটসম্যান কিংবা বিশেষ কোনো দলের বিপক্ষে ভাল বোলিং করা?
শফিউল : বিশেষ কোনো দলের কিংবা বিশেষ কোনো ব্যাটসম্যানকে টার্গেট করে বোলিং করে লক্ষ্যে পৌঁছানো অনেক কঠিন। আমার লক্ষ্য থাকবে- যে দেশের সঙ্গেই মাঠে নামি না কেন, নিজের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দিতে চাই। আর এটা করতে পারলেই সাফল্য পাব। বিশেষে কোনো টার্গেট নেই। আমার স্ট্রেন্থ অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব, ভাল খেলতে চাই।