এবার কথিত ‘গণধোলাই’য়ে নিহত ৩
এবার রাজধানীর মিরপুরে ‘গণধোলাই’য়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের দাবি, তিন বোমবাজকে স্থানীয় জনতা আটক করে গণধোলাই দিলে তারা মারা যান।
তবে স্থানীয় জনতা দাবি করেছের, কোন গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।
চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বন্দুকযুদ্ধ ও কথিত ‘দুর্ঘটনা’য় নাশকতাকারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোরে র্যাব ও পুলিশের হেফাজত থেকে পালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তবে পরিবারগুলোর অভিযোগ, সড়ক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের হত্যা করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, রবিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে মিরপুরের বেগম রোকেয়া স্মরণীতে ১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ বোমাবাজ দল জড়ো হয়। এর পর স্থানীয় জনতা তিনজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে পুলিশ তাদের আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রাজধানীর মিরপুরে গণধোলাই ও গুলিতে তিন বোমবাজ নিহত হয়েছেন। গুলি কিভাবে লেগেছে বা কারা করেছে এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
গণধোলাইয়ে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়ে মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ জানান, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের সময় জনতা গণধোলাই দিলে তারা নিহত হন। তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
গণধোলাই দিলে তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন আসল কিভাবে এই বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’
পুলিশ গণধোলাইয়ে বোমাবাজরা নিহত হয়েছে দাবি করলেও এলাকাবাসী বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, রাত ১০ থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যেই এ ঘটনা ঘটলেও উত্তেজিত মানুষের কোনো উপস্থিতি বুঝতে পারেনি। শুধু মাত্র বেশ কয়েকবার গুলির শব্দ শুনেছে।
ঘটনাস্থলের পাশেই শাহানাজের ঘর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকবার গুলির শব্দ শোনা গেছে। আমরা ভয়ে রুম থেকে বের হয়নি।’
তাদের গণধোলাই দিয়ে হত্যা করা হয়েছে- কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় মানুষ ছিল না, যা ছিল না, তা কয়ে লাভ কি। গণধোলাইয়ের ঘটনা এখানে ঘটেনি। ঘটলে অবশ্যই বুঝতে পারতাম।’
যে বাসার পাশে তাদের ‘গণধোলাই’ দেওয়া হয়েছে, ওই বাসার গৃহকর্তী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘লোকজনের হইচই শুনতে পায়নি। তবে বোমার (গুলি) শব্দ শুনেছি। তখনও বুঝতে পারেনি। বাসার পাশে এতো বড় ঘটনা ঘটছে।’
পাশেই ব্যবসা করেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘পাশেই আমার বাসা, এখানে শব্দ বা হইচই হলে তো অবশ্যই জানতে পারতাম।’
সাধারণ মানুষ একই কথা বললেও স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. নূর হোসেন বললেন ভিন্ন কথা। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা সবাই নাশকতাকারী। তারা ১৫-২০টা পেট্রলবোমা নিয়ে বাসে ছোঁড়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। পরে স্থানীয় জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে হত্যা করে।’
জনগণ গুলি কোথায় পেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলতে পারব না।’
এদিকে রবিবার রাতে মিরপুরে টেকনিক্যাল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুল ওয়াদুদ বেপারী (৩০)।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিহতের চাচা চাঁন মিয়া বেপারী তার (ওয়াদুদ) লাশ শনাক্ত করেন।
দ্য রিপোর্টকে চাঁন মিয়া বলেন, ‘আমার ভাতিজা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গণধোলাইয়ের নামে ‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে হত্যা করেছে।’
তিনি জানান, নিহত ওয়াদুদ তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মিরপুর-১ এর ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে একটি বাসায় ভাড়া থাকত। ওর বাবা অসুস্থ থাকার কারণে ৫-৬ বছর ধরে ওয়াদুদ নিজেই ঝুটের ব্যবসা করে সংসার চালাত।
চাঁন মিয়া বলেন, ‘বরিবার সকালে ব্যবসার কাজে মোটরসাইকেল নিয়ে ওয়াদুদ বের হয়, কিন্তু সারাদিন তার কোনো খোঁজ পায়নি। রাতে পরিচিত কয়েকজন এসে জানায়, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করি।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে চাচা চাঁন মিয়া আরও বলেন, ‘বৃদ্ধ বাব-মা ও এক বোনের একমাত্র ভরসা ছিল সে (ওয়াদুদ)।
এখন আমার ভাই-ভাবি কি করে সংসার চালাবে।’
পরিকল্পিতভাবে ওয়াদুদকে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবার দাবি করলেও পুলিশের দাবি সে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ই নিহত হয়েছে।
মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল বলেন, ‘রবিবার সকালে মিরপুর-২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী ‘বৈশাখী’ নামে একটি বাসে ককটেল নিক্ষেপ করার সময় ওয়াদুদকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে নিয়ে তার সহযোগীদের ধরতে টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় গেলে তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও গুলি ছোড়ে। এ সময় ওয়াদুদ পালানোর চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।’