যশোরে আ’লীগ নেতা গুলিতে নিহত
সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনকে (৬০) গুলি করে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচবাড়িয়া গ্রামে সিনজেনটা ডিপোর কাছে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলার কিসমত রাজাপুর গ্রামের মোকাম মণ্ডলের ছেলে।
কারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত পুলিশ তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন দাবি করেছেন, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম জানান, শহরের পুরাতন কসবা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে মোশাররফ হোসেন সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেন। এরপর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন গ্রামবাসীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেলে কয়েক দুর্বৃত্ত এসে মোশাররফ হোসেনকে গুলি করে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ মোশাররফকে হাসপাতালে আনেন শামসুল হক নামে এক ইজিবাইকযাত্রী। শামসুল হক জানান, ইজিবাইকটি যশোর শহরে আসার পথে ইয়াসিন নামে এক স্কুলছাত্র সেটি থামায়। সে জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার ধারে পড়ে আছেন। শামসুল হকসহ ইজিবাইকের অন্য যাত্রীরা মুমূর্ষু অবস্থায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন সকাল সাড়ে ১১টায় মোশাররফকে মৃত ঘোষণা করেন। ডা. মামুন জানান, মোশাররফ গুলিতে নিহত হয়েছেন।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী কোতয়ালী থানার এসআই শিহাবুর রহমান জানান, মোশাররফের শরীরের পেছন অংশে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইনামুল হক ঘটনাস্থলে গেছেন।
যোগাযোগ করা হলে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘খুনের সঙ্গে কারা জড়িত তা আমরা এখনও জানতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করছি ক্লু উদ্ঘাটনের। পেয়ে যাব।’
জানতে চাইলে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের সিনিয়র এএসপি রেশমা শারমিন বলেন, ‘আমি ঢাকায় রয়েছি। তবে শুনেছি একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে মারা হয়েছে। বিস্তারিত বলতে পারব না।’
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিতকুমার নাথ ও জেলা কমিটির বিদায়ী দপ্তর সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলাম খুনের ঘটনায় কারা জড়িত তা নিশ্চিত করতে পারেননি। মোশাররফ খুনের প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হবে কি না তাও বলতে পারেননি এই দুই নেতা।
জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফের খুনকে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, মোশাররফ তারই শিকার।’
শহিদুল ইসলাম মিলন অবিলম্বে মোশাররফের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নিহত মোশাররফ হোসেন একসময় যশোরের উত্তরাঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। সেসময় প্রতিদ্বন্দ্বী চরমপন্থী দলগুলোর সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এলাকাটিতে নিষিদ্ধ কোনো দলের অস্তিত্ব নেই।
চরমপন্থী দলকেন্দ্রিক শত্রুতার কারণে মোশাররফ খুন হতে পারেন কি না জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী দপ্তর সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে তিনি সেভাবে চরমপন্থী দল করতেন না।’
একই প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘পুরনো ঘটনা আমার জানা নেই।’
মোশাররফ হত্যার প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ হাসপাতাল চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।