‘খালেদার গ্রেফতারে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে’
‘গণআন্দোলনকে দমাতে না পেরে সরকার অবৈধভাবে গদি রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে’ বলে অভিযোগ করেছে ২০ দলীয় জোট।
গণমাধ্যমে বুধবার সন্ধ্যায় পাঠানো ২০ দলীয় জোটের এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের যেকোনো পদক্ষেপ সরকারের পতনকেই ত্বরান্বিত করবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ফ্যাসিবাদী একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের পথে প্রধান অন্তরায় জাতীয়তাবাদী শক্তির আস্থার প্রতীক, গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের আপোসহীন নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবৈধ স্বৈরশাসক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দলীয়করণ, কুক্ষিগতকরণ, নগ্ন হস্তক্ষেপ ও বিচারক অভিশংসন আইন পাস করিয়ে সরকার দেশে বিচারিক নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে বিরোধী দল ও মতকে দমনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে। এরই অংশ হিসেবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।’
বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেশবাসী, আন্তর্জাতিক মহলসহ সকলেই অবহিত আছেন যে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার অঘোষিতভাবে গৃহবন্দী অবস্থায় রেখেছে। যেখানে দীর্ঘ দুই সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে খাদ্য সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এখনো পর্যন্ত তিনি টেলিফোন, ফ্যাক্স, কেবল সংযোগ ও নেটওয়ার্কসহ সকল বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, ইতঃপূর্বে আদালতে যাওয়ার পথে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা দেশনেত্রীর গাড়িবহরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে দলের অনেক নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে পুলিশি সহায়তায়। অথচ ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে আদালতে উপস্থিত হতে অপারগতার কথা আদালতকে জানানোর পরও সরকারি প্রভাবে দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ হীন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মানসে সরকার এ জাতীয় মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীকে হয়রানি করার ঘৃণ্য চক্রান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা-হামলা-গ্রেফতারের ভীতি প্রদর্শন করে চলমান গণআন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশ থেকে ২০ হাজারেরও অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে এবং তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে শত শত নেতাকর্মীকে হতাহত করেও গণআন্দোলনকে দমাতে না পেরে সরকার অবৈধ গদি রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে। তার গ্রেফতারের যেকোনো পদক্ষেপ বরং সরকারের পতনকেই ত্বরান্বিত করবে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার, মৌলিক ও মানবাধিকার, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে দেশের সর্বস্তরের জনগণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সংগ্রামী জনতার ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান গণআন্দোলন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’
‘এ দেশের সংগ্রামী জনগণের ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গণমানুষের অধিকার আদায়ের ইতিহাস’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আরও বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডির ষষ্ঠ বার্ষিকী। ২০০৯ সালের এ দিনে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। যথাসময়ে দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নির্লিপ্ততার কারণেই ৫৭ চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন সেদিন প্রাণ দেন। ওই নৃশংস চক্রান্তের সঙ্গে সরকারি মহলের অনেকেই জড়িত বলে সচেতন মহল মনে করে। আজ এ শোকাবহ দিনে আমরা পিলখানা ট্র্যাজেডির সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’