পাখির চোখে জয় খুঁজছে দুই দলই
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনবহুল শহর ভিক্টোরিয়ার রাজধানী মেলবোর্ন । আবার বিশ্বের সবচেয়ে উপযুক্ত বাসযোগ্য শহরের মধ্যে শীর্ষাসনে এই শহরটি। মেলবোর্ন এমসিজিতে বৃহস্পতিবার এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের শুরু সকাল সাড়ে ৯টায়; বাংলাদেশ সময়। বৃষ্টিতে পণ্ড হওয়া ব্রিসবেনের ম্যাচ না দেখতে পারার কষ্ট ভুলতে অনেক বাঙালিকেই এই মাঠে দেখা যাবে লাল-সবুজের পতাকা হাতে। যাদের প্রেরণায় শাণিত হয়ে জয় পেতে নিজেদের উজার করে দিতে পারেন ‘পরিকল্পিত’ মাশরাফি-মুশফিক-সাকিবরা। শ্রীলঙ্কাও জয় পেতে ‘সম্মিলিত’ প্রয়াসের মেলবন্ধন রচনার ঘোষণা দিয়েছে। এক কথায় মেলবোর্নে পাখির চোখে জয় খুঁজছে দুই দলই।
ক্রিকেট ‘দেবতা’ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে বাংলাদেশ যখন খেলতে নামছে তার আগের দিনই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের সমাধিতে ফুলেল সমবেদনা জানিয়েছে তার ভক্তরা। কারণ ২০০১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার স্যার ব্র্যাডম্যান পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। ক্রিকেট বিশ্বের দ্য ডনখ্যাত এই ব্যাটার তাঁর ঈর্ষণীয় টেস্ট ক্যারিয়ারে কারণে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন; থাকছেনও।
রেকর্ডে রেকর্ডে পূর্ণ হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। অতি-উৎসাহীরা প্রতিদিন নতুন কিছু হবে; থাকছেন এই অপেক্ষায়। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে তেমন কিছু আশা করা অযৌক্তিক মানার অবকাশ নেই। যদিও পরিসংখ্যান শ্রীলঙ্কার পক্ষে; পক্ষে জয়ের বাস্তবতা এবং সম্ভাবতাও। কিন্তু ক্রিকেটের সুষমানন্দিত কাননে ফুল থেকে হুল ফুটতে পারে; এটা শ্রীলঙ্কারও জানা আছে। নিক্তির পাল্লায় মাপলে- শক্তি-প্রজ্ঞা-মেধায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে নেই। বরং বাংলাদেশ যখন কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কান চন্ডিকা হাতুরুসিংহে উজ্জ্বীবিত; তখন অভাবিত মরণাস্ত্রে ঘায়েলও হতে পারে সিংহলিজরা।
শ্রীলঙ্কান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহকে লঙ্কা-বধের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবেই মনে করেন মাশরাফি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কান কোচ তাঁর নিজ দেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত সব পরিকল্পনাই আঁটছেন, ‘কোচ আমাদের দারুণভাবে সাহায্য করছেন। বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনাও তৈরি করছেন। পুরো বিষয়টিই এখন নির্ভর করছে আমাদের ওপর, আমাদের ভালো খেলার ওপর।’
প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডে বড় গোত্তা খাওয়া শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ম্যাচেও কিন্তু স্বস্তির জয় পায়নি। দুর্বল আফগানী যোদ্ধারা এক পর্যায় পর্যন্ত বেজায় চাপে রেখেছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। যদিও বড় করে লেখা রয়েছে স্কোরসিটে শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে জয়ী। অথচ টার্গেট ছিল মাত্র ২৩৩ রানের। ৫১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অন্ধকার দেখছিল শ্রীলঙ্কা। সেখানেই নির্ভরতার প্রতীক মাহেলার সেঞ্চুরিতে বেঁচে গেছে শ্রীলঙ্কা। আর শেষ দিকে তিসারা পেরেরার ঝরো ব্যাটিংয়ে মান রক্ষা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানী শঙ্কা এক ফুৎকারে উড়িয়ে-গুড়িয়ে বড় জয়ে বিশ্বকাপের চলতি আসর শুরু করেছে। বাংলাদেশ ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে। ব্রিসবেনে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে ম্যাচে নামা হয়নি। বাংলাদেশের ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট। শ্রীলঙ্কার ২ ম্যাচে ২। এগিয়ে থাকার অনুপ্রেরণা এই ম্যাচে সঞ্জীবনী সুধা হিসেবে অনুঘটকের কাজ করবে।
শ্রীলঙ্কার ৩২ জয়ের বিপরীতে মাত্র ৪ জয় বাংলাদেশের। কিন্তু সংখ্যা ৪ হলেও সেখানে রেকর্ডবুকে কিন্তু বাংলাদেশের জয় কথাই স্পষ্ট করে লিখা। এর বাইরে অনেক আফসোসের ম্যাচ অভিজ্ঞতা দিয়ে জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য ভারতের মতো বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সব জয়ের রেকর্ড নিয়ে অহম করতে পারে শ্রীলঙ্কাও। ২ ম্যাচে ২টিই বড়মাপের জয়।
বাংলাদেশের এই ম্যাচে মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনের পাশে চতুর্থ পেসার হিসেবে সৌম্যকে পাচ্ছে। স্পিন নিয়ে খুব সঙ্কট নেই। সাকিব-মাহমুদউল্লাতো থাকছেনই। আগের দিন নেটে আঙুলে চোট পাওয়া মুশফিককে নিয়ে সংশয় নেই। খেলছেন তিনিও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে একাদশকে দেখা গেছে; শেষমেশ তাই থাকছে-টিম ম্যানেজমেন্টের আভাস এমনই।
শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং বোলিং বিশ্বমানের। রানে মাহেলা। নামের মতো রানে নেই সাঙ্গা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বাধিক সফলতম ব্যাটার সাঙ্গাকারাকে হয়তো এই ম্যাচে জয়ের ঘোড়া মানতে ভুল করবে না লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কান তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই ম্যাচেই কুমার সাঙ্গাকারা ৪০০তম ক্লাবে নাম লিখাবেন।
যে স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে; তাতে নিয়ে ক্রিকেটের অনেক মহাকাব্য রচিত হয়েছে। শুধু আয়তনেই নয়, ক্রিকেটীয় ঐতিহ্যেও অনেক উঁচুতে এমসিজি। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের এগারোতম বৃহত্তম এই স্টেডিয়ামটি রয়েছে মেলবোর্নের ইয়ারা পার্কে। সংক্ষেপে স্টেডিয়ামটিকে এমসিজি এবং স্থানীয়রা এটিকে ‘দ্য জি’ বলে থাকেন। ১৮৫৩ সালে নির্মিত হলেও এই স্টেডিয়ামে সরকারিভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ। অনেকের মতে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের সঙ্গেই শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রাপথ। এ কারণে এমসিজি-কে ক্রিকেটের পূণ্যভূমিও মনে করা হয়। ভিক্টোরিয়ান হেরিটেজ রেজিস্টারের রেকর্ডের পাতায় এক লাখ ২৪ হাজার দর্শকাসনের এই স্টেডিয়াম ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল হেরিটেজ লিস্ট-এ জায়গা পেয়েছে। এই স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ানরাই নয় আইসসিও আলাদা করে রেখেছে। আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছে। আইসিসি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৩টি ম্যাচ ছাড়াও এখানে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ফাইনাল খেলা। আগামী ২৯ মার্চ ওই ফাইনাল ম্যাচ দেখতে হয়তো একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও উপস্থিত থাকতে পারেন।