অভিজিৎ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ টিএসসি
প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিক্ষুব্ধ লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ব্লগার-অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টরা সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
‘আক্রান্ত মুক্তচিন্তা’র ব্যানারে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক কামাল লোহানী বলেন, বইমেলা থেকে ফেরার পথে ওই একই স্থানে মৌলবাদীদের আক্রমণে নিহত হন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও সে হত্যার কোনো বিচার হয়নি। বিচার না হওয়ার কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন একটি মুক্তচিন্তা চর্চার স্থানে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সাহস পেয়েছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করে মুক্তচিন্তার চর্চা বাধাগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের সব নাগরিককে হত্যা করলেও তারা এ চর্চা থামিয়ে দিতে পারবে না।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীসহ তিন শতাধিক প্রতিবাদী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে লেখক দম্পতি অভিজিৎ রায় ও রাফিদা বন্যার আক্রান্ত হওয়ার স্থানে রজনীগন্ধা, গোলাপ ফুল দিয়ে ঢেকে দিয়ে ব্লগার এ্যান্ড এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন। তারা সেখানে মানববন্ধন করে।
এদিকে অভিজিৎকে হত্যা ও রাফিদা বন্যার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুক্রবার সকালে পৃথক মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
বইমেলা থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিএসসির সামনে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে লেখক দম্পতি অভিজিৎ রায় ও রাফিদা আহমেদ বন্যাকে (৩০)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে অভিজিৎ রায় মারা যান। গুরুতর আহত বন্যা সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক এ কে এম রিয়াজ মোর্শেদ জানান, অভিজিতের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। তার মাথায় ১০টি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বন্যার মাথায় ৩টি আঘাত লেগেছে। তার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশ থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করেছে।
ড. অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, ‘স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’, ‘সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’, ‘শূন্য থেকে মহাশূন্য’, ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’, ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো : এক রবি বিদেশিনীর খোঁজে’ ইত্যাদি।