অভিজিতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন ‘মাথার হাড় ভেদ করে মগজ পর্যন্ত কেটে যায়’

ovijit-homeলেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের (৩৮) মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথার চামড়া ও হাড় ভেদ করে মগজ পর্যন্ত কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিকারী চিকিৎসক ।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত গোলদার শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাসুম বেলা পৌনে ১টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করেন।
এসআই সুব্রত সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন- অভিজিৎ রায়ের মাথায় (ঘাড়ের উপরে) তিনটি গুরুতর জখম, অন্যপাশে আরও দুটি এবং পিঠে একটি জখমের চিহ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বিশেষ করে তার (অভিজিৎ) মাথায় যে তিনটি আঘাত হয়েছে, তাতে চামড়া ও হাড় ভেদ করে মগজ পর্যন্ত কেটে গেছে। এ ছাড়া শরীরে জখমের আরও কয়েকটি চিহ্ন আছে। ঘটনার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে, এ হত্যার ঘটনায় মামলা করেছেন অভিজিৎ রায়ের বাবা শিক্ষাবিদ ড. অজয় রায়। অজ্ঞাতসংখ্যক আসামী করে শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় তিনি এ মামলাটি দায়ের করেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে মামলার (মামলা নং-৫১) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বইমেলা থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিএসসির সামনে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে লেখক দম্পতি অভিজিৎ রায় ও রাফিদা আহমেদ বন্যাকে (৩০)।ovijit-inner
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে অভিজিৎ রায় মারা যান। গুরুতর আহত বন্যা সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশ থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী বলেন, অভিজিৎ রায় বিদেশে থাকাবস্থায় মুক্তমনা নামে একটি ব্লগে লেখালেখি করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন।
এর আগে, ঢামেক হাসপাতালে ভর্তির পর বন্যা জানান, তারা এক সপ্তাহ আগে আমেরিকা থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। বৃহস্পতিবার বইমেলায় ঘোরা শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিএসসিতে পৌঁছলে কয়েকজন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তারা গুরুতর জখম হন। তবে কে বা কারা কী কারণে এ হামলা চালিয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অহিদুজ্জামান জানান, হামলার কোনো কারণ জানা যায়নি এবং জড়িতদেরও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ চেষ্টা করছে।
ড. অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, ‘স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি’, ‘সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’, ‘শূন্য থেকে মহাশূন্য’, ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’, ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো : এক রবি বিদেশিনীর খোঁজে’ ইত্যাদি।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে প্রগতিশীল লেখক ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছিল।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend