অভিজিৎ রায় হত্যা ‘টার্গেট ইজ ডাউন’ আনসার বাংলা-৭ এর পোস্ট
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর ‘টার্গেট ইজ ডাউন’ লিখে টুইটারে বার্তা দিয়েছে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের একটি সংগঠন।
টুইটারে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পোস্ট করা বার্তায় সংগঠনটি অভিজিৎ রায়কে হত্যার ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে। আল কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ সংগঠনটি অভিজিৎ রায়কে ‘ইসলামের শত্রু’ বলে আখ্যা দেয়। সেখানে বলা হয়, ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধ করায় অভিজিৎ রায়কে গত ৩/৪ বছর ধরে ‘টার্গেটে’ রাখা হয়।
অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর টুইটারে ‘হ্যাঁ, আমরা পেরেছি’ বলে উল্লাস করে সংগঠনটি। এ ছাড়া ‘আজ মহান দিন’ উল্লেখ করে ‘বাংলাদেশে আজ বিশাল এক সফলতা অর্জিত হয়েছে’ বলেও টুইটারে উল্লেখ করে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের ওই সংগঠনটি।
এ ছাড়া রাত ১টার দিকে ‘আনসার বাংলা-৭’ এর পক্ষে পোস্ট করা হয়, ‘টার্গেট ইজ ডাউন, ওয়েট ফর দ্য নেকস্ট’।
‘আনসার বাংলা-৭’ এর পক্ষে আরও বলা হয়, ‘টার্গেট একজন ইউএস বাংলা সিটিজেন। মুসলমানদের ভয়ে সে ইউএসে বসবাস করছে। বইমেলায় অংশ নিতে ৫/৬ দিন আগে সে ঢাকায় আসে।’
টুইটারে অভিজিৎ রায়ের মাথা ধরা হাতে স্ত্রীর রক্তাক্ত ছবি দিয়ে লেখা হয়, ৩/৪ বছর ধরে সে (অভিজিৎ) ‘টপ টার্গেটে’ ছিল।
অভিজিৎ রায়কে যে আগে থেকেই অনুসরণ করা হচ্ছিল তা টুইটারে ‘আনসার বাংলা-৭’ এর বিভিন্ন পোস্ট দেখে বোঝা যায়। সেখানে উল্লেখ আছে, ‘টার্গেট ৫ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেয় এবং এর ২ ঘণ্টা পর তাকে হত্যা করা হয়।’
টুইটারে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ভিআইপি টার্গেট ইজ ডাউন। ইয়েস ব্রাদার, উই ক্যান।’
উল্লেখ্য, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের আগে সর্বশেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘আনসার বাংলা-৭’ সংগঠনটি টুইটারে বার্তা পাঠায়।
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ওই ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে।
এদিকে, ওই ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিজিৎ রায়ের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায় মামলাটি করেন।
তিনি দাবি করেন, আমার ছেলেকে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীই হত্যা করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ ও ব্লগার রাজীব হায়দারকে জঙ্গিরা একইভাবে আঘাত করে হত্যা করেছিল। দুটি ঘটনাতেই জঙ্গিরা জড়িত বলেই প্রমাণিত হয়েছে।
ড. হুমায়ুন আজাদকে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একইভাবে আঘাত করা হয়েছিল। ওই বছরের ১১ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান তিনি। একইভাবে ব্লগার রাজীবকে ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পল্লবীতে নিজ বাসার সামনে হত্যা করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, ‘হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ ও র্যাব সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
ডিএমপির রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের পর বলা যাবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা রক্তমাখা দুটি চাপাতি ও একটি স্কুলব্যাগ উদ্ধার করেছি। অভিজিতের স্ত্রী এখনো ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এ রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে।’
গণজাগরণের টানা অবস্থান
অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ফের শাহবাগে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন গণজারণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। শুক্রবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ইমরান এইচ সরকার এ সময় বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত খুনিদের গ্রেফতার করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগে অবস্থা করবে। হত্যাকারী গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত গণজারণ মঞ্চের কর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।
এদিকে অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক ব্যানারেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সেই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, খুশি কবির, ঢাবি শিক্ষক রুবায়েত ফেরদৌসসহ আরও অনেকেই।