‘যথাসময়ে রিভিউ করবেন কামারুজ্জামান’
আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে যথাসময়ে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করবেন জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।
কামারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ শেষে তার আইনজীবী এ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির এ কথা বলেন। কামারুজ্জামানের মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তবে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেউ-ই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। কামারুজ্জামানের স্ত্রী নূরুন্নাহার, মেয়ে আফিয়া নূর, পুত্রবধূ শামীম আরা, শ্যালক আবুল কালাম আজাদ, ভাগ্নে সানোয়ার হোসেন এবং তিন ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, শাহানা জেবিন ও আফরোজা জাহান বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে তারা বের হন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তার সঙ্গে পরিবারের এটিই প্রথম সাক্ষাৎ।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়।
কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মো. মুনির বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের কামারুজ্জামান জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ডের রায়ে তিনি মোটেই বিচলিত নন। তিনি নির্দোষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করছে- এ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। কামারুজ্জামান তার পরিবারের সদস্যদের কাছে উচ্চ আদালতে রিভিউ করে খালাস পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।’
শিশির মনির পরিবারের বরাত দিয়ে আরও বলেন, কামারুজ্জামান জানিয়েছেন, যে অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে- এর কোনো ভিত্তি নেই। তরুণ প্রজম্ম একদিন প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের জানান, এটি নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ। তারা ৫৫ মিনিটের মতো ভেতরে ছিলেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় এ দিন প্রকাশিত হয়। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
ওই দিন রাত পৌনে ৮টায় আপিল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারপতি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।
পরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আইজিপি (প্রিজন)-এর বরাবরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়ে দেন।
গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় সংক্ষিপ্ত আকারে দেন আপিল বিভাগ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।