তবুও ২ জয় চাই মাশরাফিদের
শ্রীলঙ্কার কাছে ইংল্যান্ড যেন হেরে যায়; এমন প্রার্থনাই ছিল বাংলাদেশী ক্রিকেটমোদীদের। সৃষ্টিকর্তা সেই প্রার্থনা শুনেছেন। রবিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে গ্রুপপর্বের খেলায় ইংল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফলে এবারের আসরে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার পথটা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে, আপত দৃষ্টিতেই তেমন হিসাবই ভাসছে চোখের সামনে। কিন্তু অাদৌ বিষয়টি তেমন নয়। ইংল্যান্ড এই ম্যাচ জিতলেও যা, হারলেও তা; কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে হলে বাংলাদেশকে পরবর্তী ৩ ম্যাচের ২টি জয় পেতেই হবে। নয়তো আশার প্রদীপ খুব একটা আলো ছড়াতে পারবে না।
রবিবার শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচ শেষে ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তা অনেকটা এরকম-৪ ম্যাচ খেলে পূর্ণ ৮ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে টেবিলের শীর্ষ দল নিউজিল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কাও প্রায় কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ ৩টি করে ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছে ৩ পয়েন্ট (দুই দেশের মধ্যকার ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়েছে)। রান গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে বাংলাদেশ অবস্থান করছে টেবিলের তৃতীয়স্থানে। অস্ট্রেলিয়ার পর, অর্থাৎ টেবিলের পঞ্চমস্থানে রয়েছে ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করা আফগানিস্তান। ৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ড রয়েছে ৬ষ্ঠস্থানে। আর টেবিলের সবেচেয়ে নিচে থাকা স্কটল্যান্ড ৩ ম্যাচ খেললেও কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা বাদে এই গ্রুপে থেকে বাকি ২টি দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালের ছাড়পত্র পাওয়ার লড়াইটা সীমাবদ্ধ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের মধ্যেই। স্কটল্যান্ডকে এই হিসাবের বাইরে রাখতে হচ্ছে; এর কারণ, বাকি ৩ ম্যাচে স্কটিশদের পক্ষে খুব বেশী কিছু করে দেখানোর সুযোগ একেবারেই নেই বললে চলে। অন্তত গত ৩ ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স তেমনটাই বলছে।
গ্রুপ পর্বের খেলায় বাংলাদেশের পরবর্তী ৩ ম্যাচের প্রতিপক্ষ দলগুলো হলো- স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার অবশিষ্ট ৩ ম্যাচের প্রতিপক্ষ হলো- আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশ ছাড়াও ইংল্যান্ডের আরেকটি খেলা বাকি থাকবে আফগানিস্তানের সঙ্গে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর স্বাগতিক দেশ হওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়া খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে না পারলেও ৭ পয়েন্ট নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। আর শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলে তো কথাই নেই; ৯ পয়েন্ট নিয়ে সোজা কোয়ার্টার ফাইনালের বিমানে চড়ে বসবে অস্ট্রেলিয়ানরা। শ্রীলঙ্কা এই ম্যাচ জিততে না পারলেও শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। দুর্দান্ত ফর্মে ফেরা লঙ্কানদের পক্ষে স্কটিশদের হারানো খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালের বিমানযাত্রী হবে শ্রীলঙ্কাও। প্রশ্ন হচ্ছে, বাকি কোন দলটি এই গ্রুপ থেকে কোয়ার্টারে জায়গা পাবে? আর সেই হিসাব কষতে গেলেই লড়াইটা সীমাবদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের ২ পয়েন্ট। ইংল্যান্ডের বাকি দুটি ম্যাচের একটি আফগানিস্তানের সঙ্গে; ওই ম্যাচে ইংল্যান্ড জয়ের পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। ফলে ইংলিশদের পয়েন্ট হবে ৪। অন্যদিকে, শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়ার স্বপ্নটা এই মুহূর্তে আকাশ-কুসুম কল্পনার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা, কিউইরা এখন দুর্দান্ত ফর্মের স্বর্ণ শিখড়ে। তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পয়েন্ট হবে ৫। ফলে বাংলাদেশ না ইংল্যান্ড-কোন দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে সেই প্রশ্নের উত্তরটা আসলে মিলবে ৯ মার্চ অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচটিতেই। ওই ম্যাচের জয়ী দলই এগিয়ে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে। রবিবার শ্রীলঙ্কার কাছে ইংল্যান্ডের হারে তাই বাংলাদেশের খুব একটা যে প্রাপ্তির কিছু রয়েছে, অদৌ বিষয়টা তেমন নয়। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে চাইলে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে বাকি ৩ ম্যাচের ২টিতে জিততেই হবে। এর বিকল্প কিছু নেই।
তবে কথায় বলে ক্রিকেট অনশ্চিয়তার খেলা। সেই ক্ষেত্রে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড যদি বিস্ময়কর কিছু আগামীতে ঘটিয়ে ফেলে, তাহলে হয়তো স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতেও কোয়ার্টার ফাইনালের স্বাদ নিতে পারে বাংলাদেশ। অন্যথায়, জিততেই হবে বাকি ৩ ম্যাচের ২টিতেই।