সব দল না এলেও ডিসিসি নির্বাচন : সিইসি
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চেয়েছিলাম, কিন্তু সবাই আসেননি। ৫ জানুয়ারির মতো সব রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও ডিসিসি নির্বাচন করতে হবে।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রবিবার বিকেলে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘আমরা সবাইকে (রাজনৈতিক দলগুলো) নিয়ে আসার চেষ্টা করব। সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাব। তার পরও যদি সবাই না আসে নির্বাচন করতে হবে।’
রকিবউদ্দীন বলেন, ‘ডিসিসি হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আপনারা জানান, এটা নির্দলীয়। এই নির্বাচনে কোনো পার্টির প্রতীক ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। নির্দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন পার্টি বিভিন্নভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে। কারণ নির্বাচন তো একটি রাজনৈতিক বিষয়। তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রার্থীকে সাপোর্ট দিয়ে থাকে, আবার নাও দিতে পারে।’
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে সামনে আমোদের কোনো বাধা নেই। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতাও দূর হয়েছে। এখন দু’টো বিষয় চূড়ান্ত করতে হবে। একটি হল— ওয়ার্ড অনুসারে ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখা। অপরটি ভোটকেন্দ্র। তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করতে হবে। এরপর গেজেট প্রকাশ করে প্রস্তুতি শেষ হবে। তার পর তফসিল ঘোষণা করব। আমরা কাজটি নির্ভুল করতে চাই, কর্মকর্তাদের তেমন নির্দেশনায় দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা চলছে। এইচএসসি পরীক্ষাও ১ এপ্রিলে শুরু হবে। তারপর রোজা আসছে। রোজার মধ্যেও আমরা নির্বাচন থেকে বিরত থাকি। সব কিছু বাদ-ছাদ দিয়েই নির্বাচন করতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রাণলয়ের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করব। এরপর একটি পছন্দমতো তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আইন বাঁচিয়ে নির্বাচন করতে হবে। ১৮০ দিন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। ১৮০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। ২৬ জুলাই বৈঠক হয়েছিল, সে হিসেবে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে সময় রোজা থাকবে। তাই রোজার আগেই সিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ছক করা হয়েছে।’
বর্তমানে নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে কিনা এবং ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ইসি ভাবছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ঢাকাবাসী ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছে। তারা চায় নির্বাচন হোক। বিদ্যমান প্রশাসক দিয়ে নাকি তাদের কাজ হচ্ছে না। হওয়ার কথাও না। তবে নির্বাচনের আগে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করব। আশা করছি, নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। যাতে লোকজন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।’
ডিসিসি নির্বাচনে সেনাবাহিনী ব্যবহার করা হবে কিনা— জানতে চাইলে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো ছোট নির্বাচনে এর আগে কখনো সেনাবাহিনী ব্যবহার করিনি। নরমাল আইনশৃঙ্খালা বাহিনী দিয়েই নির্বাচন পরিচালনা করেছি।’
তবে আমরা তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে থাকি। তাদের কাছে একটা ছক ইসির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে হিসেবে কাজ করে। পরে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী কোথাও র্যাব, কোথাও পুলিশ সদস্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এক সঙ্গে করার কোনো পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবগুলোই আমরা মাথায় রাখব।’
সিইসি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় আমাদের সাপোর্ট করে থাকে। আপনারা জানেন, পরীক্ষার সময় একরকম চেয়ার টেবিল সাজানো থাকে। পরে চেয়ার টেবিল আবারও ওলট-পালট করতে হয়। এ কারণে একটি গ্যাপের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতেও সময় লাগে। কাজেই কিছুটা সময় আমাদের লাগবে। সেটা নিয়ে আমরা তাদের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) সঙ্গে বসব, বড় না হলেও মাঝারি সাইজের একটি গ্যাপ যদি তারা দেন, তার মধ্যে নির্বাচন করে ফেলব। ক্রিকেটার যেমন একটা গ্যাপ খোঁজেন। তেমন একটি গ্যাপ চাই আমাদের। স্কুল-কলেজ ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’
রোজার আগে ডিসিসি নির্বাচন করতে চান কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি (সিসিসি) নিবার্চন রোজার আগেই করতে হবে। ডিসিসি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলী, জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।