সহিসংসতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ড. কামালের
সন্ত্রাস ও সহিসংসতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে সংবিধানের যে সকল ঘাটতি রয়েছে সেগুলো সংকুলান করা উচিৎ। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সংবিধান পরিবর্তনের চেয়েও জরুরী সরকারের মানসিকতার পরিবর্তন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সোমবার এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এ সব কথা বলেন। ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ড. কামাল বলেন, ‘দেশটাকে আমরা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। দেশের সকলের প্রতি আমার শেষ আবেদন, সবাই উঠে দাঁড়ান। সামনে আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আমরা অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা আর চাই না। তাই আমাদের সকলে মিলে একটা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
আমরা সন্ত্রাস-সহিংসতা-সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিমুক্ত একটা সমাজ চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতগুলো মৌলিক বিষয়ে আমাদের ঐক্য থাকার পরও আমরা কেন গায়ে পড়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছি। আমাদের এ বিষয়ে সমাধানে আসা উচিৎ।’
‘আইনের নিরপেক্ষতা না থাকলে জাতীয় ঐক্য বিঘ্নিত হয়’ বলেও মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ না থাকলে কোনো ঘটনারই সঠিক তদন্ত হয় না। এখানে শাসন ব্যবস্থার মধ্যেই ঘাটতি রয়েছে। সংবিধানে আইনের শাসনের কথা বলা হলেও কী কারণে তা হচ্ছে না, সেটা খতিয়ে দেখে ঘাটতিগুলের সংকুলান করা উচিৎ।’
ড. কামাল বলেন, রাজনীতিতে রোগ ঢুকে গেছে। সংবিধানকে কার্যকর করতে অসুস্থ রাজনীতির দলীয় প্রভাবই প্রধান বাধা। কোনো সন্ত্রাস এবং পুলিশের ভয় ছাড়া আমরা নিরাপদে চলাচল করতে চাই। এটাই সংবিধান শাসনের মাপকাঠি। আর এ জন্য সরকারের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী।
‘বিরোধে বাতাস দিব, নাকি সমাধান চাইব’ এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কোথাও কোনো বিরোধ থাকলে সবাই বসে সমাধান করাটাই সুষ্ঠু মস্তিষ্কের সুষ্ঠু চিন্তা। যারা না বসার কথা বলছে সেটা কখনোই সুষ্ঠু চিন্তা নয়।
ড. কামাল বলেন, অনেকে বলছে আমি নাকি বোমা মারা, বাস পোড়ানোর কথা বলি না। এ কথা আমি শত শত বার বলেছি। হাসপাতালেও পোড়া মানুষদের দেখতে গিয়েছি। পাশাপাশি সরকারি বাহিনীর গুম হত্যার প্রতিবাদও করেছি।
তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব দেশকে স্থিতিশীল রাখা। যারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করছে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বও সরকারের। জনগণ চায় দেশের স্বাভাবিক অবস্থা। আজকে সরকার যদি দেশের স্বাভাবিক অবস্থা চাইতো তাহলে আমাদের সবাইকে বলতো, আসুন আলোচনা করে সংকট সমাধান করি।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশের মালিক ১৬ কোটি জনগণের জায়গায় এখন একজন মালিকে পরিণত হয়েছে। তাই ড. কামালের নেতৃত্বে একটি সংবিধান কমিশন গঠন করে সংবিধানের ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলো সংশোধন করা হোক।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশটা জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে, ক্রসফায়ার বন্ধ হচ্ছে না। এ সব বন্ধ করতে হবে। ভিন্ন মত ও পথ দমন না করে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে নির্বাচন দিন। জনগণ চাইলে আপনি আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন।’
আ স ম আব্দুর রব বলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাতো ফোনালাপের বিষয়টি স্বীকার করেছে। তার পরও কেন তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হলো। দেশটা মগের মুল্লুক নাকি? ড. কামালকেও গ্রেফতারের কথা বলার মতো দুঃসাহস কীভাবে হয় সরকারের?’
আব্দুর রব বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ২৫ মার্চ থেকেই মানুষ জানে। এর আগে থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতের কথাটাও নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যারা নিউক্লিয়াস, ২ মার্চ, ৩ মার্চ ও বিএলএফ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তারাও প্রকৃত ইতিহাসকে আড়াল করার অপচেষ্টা করছেন।’
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ইতিহাস অস্বীকার বা উপেক্ষা করার সংস্কৃতি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন