যেখানে নাশকতা সেখানেই যৌথবাহিনীর অভিযান
দেশে চলমান হরতাল ও অবরোধে, সহিংসতা প্রতিরোধে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার। এবার যেখানে সহিংসতা কিংবা নাশকতার খবর পাওয়া যাবে সেখানেই তাৎক্ষণিক যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের প্রথম বছরপূর্তির দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং একই দিন ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস’ ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ডিএমপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ)।
দুই রাজনৈতিক জোটের রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি এমন কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। এর দুই দিন আগে ৩ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এক ধরনের অবরুদ্ধ অবস্থায় গুলশান কার্যালয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে বালু, ইট ও পাথরের ট্রাক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও গত ৫৮ দিন ধরে কার্যালয়েই অবস্থান করছেন খালেদা। সোমবার অবরোধ কর্মসূচির ৫৫ দিন কেটে গেল। পাশাপাশি চলছে হরতাল কর্মসূচি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলমান হরতাল ও অবরোধে মোট ১১৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলবোমা ও আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন ৬০ জন। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৩৬ জন; সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জন। যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুর ১ হাজার ২৪৩ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি ১৩০ জন। জনসাধারণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘নাশকতা প্রতিরোধ, পণ্য সরবরাহ এবং জীবনমান স্বাভাবিক রাখার জন্য সন্ত্রাসীরা যেখানে যানবাহনে আগুন দেবে, সেই এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খুনীদের ধরার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। উল্লেখিত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক এ কার্যালয়কে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) অবহতি করার জন্য নিদের্শক্রমে অনুরোধ করা হল।’ নির্দেশনার অনুলিপি পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) মহাপরিচালক বিজিবি, র্যাব ও আনসারকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায়ও নাশকতা প্রতিরোধের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়- যানবাহনে হামলা ও সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের প্রতিরোধ করা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সরকারী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার সদস্যগণ সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে ১৫ মার্চের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহতি করার জন্য সোমবার (২ মার্চ) সারাদেশে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। ইতিবাচক মানসিকতা, মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার প্রয়োগ ঘটিয়ে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে সহায়তার কাজে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের জন্য রিকুইজিশনকৃত যানবাহনের জ্বালানি খরচ প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসকগণ নিজেদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করবেন। এরপরও অর্থের প্রয়োজন হলে এবং এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট চাহিদা প্রেরণ করা হলে অর্থ বিভাগের সাথে যোগাযোগ/সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েগঠিত কোর কমিটির সভা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠানপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, চলমান সহিংসা প্রতিরোধে সরকার আন্তরিক। সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য শুধু যৌথ অভিযান নয়, যেখানে যা করা তাই করবে সরকার। যারা সহিংসতা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।