খালেদার গ্রেফতারে সঙ্কট বাড়বে : ক্রাইসিস গ্রুপ
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট বাড়বে। প্রধান দুই দল ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ একটি কঠিন অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের মাসিক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশের সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত জানুয়ারি থেকে ১০০ জনেরও বেশী লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়বে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনই ইতিবাচক পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ কঠিন অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।’
প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, বাংলাদেশের চলমান অচলাবস্থা, সহিংসতা বন্ধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচিত বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো। অন্যদিকে বিএনপির উচিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা। নতুবা বাংলাদেশ রাজনীতিশূন্য সহিংস দেশে পরিণত হবে।
ক্রাইসিস গ্রুপ জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ভিন্নমত বা দ্বিমতের ক্ষেত্রে সহনশীল আচরণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দমন-পীড়নের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারি, বাংলাদেশের চলমান জাতীয় সংসদের এক বছর পূর্তির সময় বড় দুইটি দলের বিপরীতমুখী কর্মসূচির পর থেকে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটেই চলছে। এই সহিংসতায় অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিদিনই আহতদের সংখ্যা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুইটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে রেশারেশি চলছে। বর্তমান সময়ে তাদের এই রেশারেশি বাংলাদেশকে অচলাবস্থার শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর বিএনপি চাইছে, রাজপথের শক্তির মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে এবং ক্ষমতায় যেতে। প্রাক-নির্বাচনী পর্যায়ের আগেই দেশটিতে প্রতিদিন সহিংস ঘটনা ঘটছে। অতি দ্রুত এই সহিংসতা বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল দেশে পরিণত হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল দেশটিতে ঐক্য গড়া থেকে আরও বিভাজনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে (তারা যখন বিরোধী দলে ছিল, সেই সময়কে স্মরণ করা প্রয়োজন)। বিএনপিকে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপোসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে পুনর্জীবিত করা উচিত। নতুবা রাজনীতিতে হিংসাত্মক ঘটনা ও সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দল একে অন্যের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে না চাওয়ায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই। এতে করে দেশটিতে সরকারি ও বিরোধী দল কারোরই আইনের শাসনের প্রতি আস্থা নেই। দেশটিতে চরমপন্থী ও অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। যা রাজনীতিকে শূন্য করে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই দেশটিতে ইসলামিক সহিংসতা মাথাচারা দিয়েছে, যা গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য হুমকি।