তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োজন : রব
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সব কিছু নিয়ন্ত্রণে। আবার নিজেই মন্ত্রীদের বলছেন সাবধানে চলতে। তাহলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলো সব? দেশের অবস্থা খারাপ। আমি জানি না কতদিন এভাবে চলবে! ময়লা দুই দলেই লেগে গেছে। এখন তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োজন।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে ‘৩ মার্চ ’৭১ উদযাপন কমিটি’।
তিনি বলেন, দুইজোটের বাইরের লোকদের একত্রিত হয়ে এদের বলতে হবে, জনগণ আপনাদের চায় না। অনেক মানুষ পোড়াইছেন, ক্রসফায়ার দিছেন, এবার থামেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাইকে ডাকেন। আলোচনা করে নির্বাচন দেন। এরপর আপনি (শেখ হাসিনা) মরণ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন, আমাদের আপত্তি নেই।
সভায় তিনি আরও বলেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মানুষের কথা নেই। তারা মরা লাশ হলেও ক্ষমতায় থাকবে। আগে যারা শাসন করেছে, আমরা তাদের ইতিহাস ভুলিনি। চুরি করে কোথায় কত টাকা পাচার করেছে মানুষ জানে। এখন যারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত চুরির পরিকল্পনা করছে, তাও জানে। জনগণ বোকা নয়।
জেএসডি’র সভাপতি বলেন, সহিংস রাজনীতির নাম গণতন্ত্র হলে, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। যারা সংসদে নেই-বিরোধীরা শুধু সহিংস রাজনীতির তাণ্ডবে দায়ী নয়। পেট্রোলবোমা ও আগুনে পোড়ানোর যে ঘটনা ঘটছে, এটা শয়তানের শয়তানি। শয়তান ‘মিঠাই’ লাগিয়ে দূরে সরে তামাশা দেখে। শয়তানের মত ৫ জানুয়ারি আঠা লাগিয়ে দিয়েছেন। সিল পড়ে গেছে সেদিন। মনে করছেন, বাংলার মানুষ ভুলে গেছে? ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, মানুষের বুকের মধ্যে দাগ লেগেছে। এটা গুলি করলেও উঠবে না।
রব বলেন, ওই দিন পঙ্গু হাসপাতালে গেলাম। শত শত লোক পঙ্গু হয়েছে পুলিশের গুলিতে। নয়ন বাছার নামের একটা ছেলে আছে। তারে গুলি করে পুলিশ পঙ্গু করে দিয়েছে। ৪ জানুয়ারি সদরঘাটে বাসে আগুন দিয়েছিল। সবাই দৌঁড়াচ্ছে ভয়ে। নয়ন বাছারও দৌঁড়িয়েছে। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে পায়ে ৮টা গুলি করেছে। পুলিশ দাবি করছে, ‘সে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী, আগুন দিয়ে পালানোর সময় গুলি করেছে।’ পালানোর সময় গুলি করলে ‘গুলি’ থাকবে পেছনে, সামনে কেন? পায়ে, হাঁটুতে কেন? আগুনে পোড়াদের টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, কিন্তু পুলিশ-র্যাব ক্রসফায়ারে দিয়েছে। তাদের টাকা দেবে কে? ওদের কি করবেন? ক্রসফায়ার যতগুলো, সবগুলো হাঁটুর উপর ও পায়ে গুলি। এরা আর চলে ফিরে খেতে পারবে না। প্লিজ একটু পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসেন। এই ক্রসফায়ার কি গণতন্ত্র?
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২ ও ৩ মার্চ না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হতো না। ২ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকা উত্তোলন দিবস, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস। এটা জাতির অস্তিত্বের ব্যাপার। আপনারা হয়ত কল্পনাও করতে পারবেন না। একটা স্বাধীন দেশে স্বাধীন পতাকা থাকতে আরেকটা পতাকা উত্তোলন! যদি আমরা স্বাধীনতা না পেতাম, তাহলে আমরা যারা এই পতাকা উত্তোলন ও ইশতেহার পাঠ করেছি তাদের কি হতো? ফায়ার দিত। ভ্রুণ হত্যা করবেন না। ভ্রুণ হত্যা করলে শিশু জন্ম নেয় না। ‘নিউক্লিয়াস’ স্বাধীনতার ভ্রুণ।
রব বলেন, আজকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ডাকাতি-ছিনতাই-হাইজ্যাক করে, মদ খায়, জুয়া খেলে ছেলেরা। তারা কি জয়বাংলার ইতিহাস জানে? আজকে আওয়ামী লীগ আর শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ এক না। আওয়ামী লীগ তো ‘স্বাধীনতা’ স্বীকারই করে না। ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ কি তাদের দলীয় কোনো মিটিংয়ে পাশ করা হয়েছিল? যারা ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর….. স্বাধীন কর’ স্লোগান দিয়েছে, তাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। আজকে তারাই মন্ত্রী। ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ ও সিরাজুল আলম খানদের অস্বীকার করলে বাংলার স্বাধীনতা অসত্য হয়ে যাবে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও ব্যারিস্টার শুক্লা সারওয়াত সিরাজের পরিচালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান প্রমুখ।