কারাগারকেই নিরাপদ মনে করেন খালেদা : হাসিনা
কারাগারকেই নিরাপদ জায়গা মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, এ জন্য তিনি আদালতে হাজিরা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেফতার হতে চান।
জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরপর্বে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘তিনি (খালেদা) নিজের কার্যালয়ে অবস্থান করে নাটুকেপনা করে জনগণ ও কূটনীতিকদের সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) নিতে চাচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। তিনি নাকি আদালতে যাবেন না। তার নাকি নিরাপত্তার অভাব। যিনি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তার নাকি নিরাপত্তা দিতে হবে আমাদের। তার পরও দেশে যাতে আইনের শাসন চলে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরও আদালতে যাননি। এখন কোর্ট যেভাবে নির্দেশ দেবে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খালেদা জিয়াকে জঙ্গিনেত্রী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া যেভাবে জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালিয়েছেন, তাতে তিনি নিজেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। এ কারণে তিনি কোর্টে যান না। আইন-আদালত মানেন না। বিএনপির বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা খালেদা জিয়ার এমন জঙ্গি কর্মকাণ্ড পছন্দ করেন না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) নিজেই চাচ্ছেন, তাকে গ্রেফতার করা হোক। বিদেশী সহানুভূতি চাচ্ছেন তিনি, জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য নাজিমউদ্দিন রোডকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ খুন করা, মানুষকে পুড়িয়ে মারা, দেশের ক্ষতি করা— এটাই যেন এই জঙ্গিনেত্রী খালেদা জিয়ার কাজ এবং সেটাই তিনি করে যাচ্ছেন। আদালতের প্রতি তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। আদালতের নির্দেশও তিনি মানবেন না, তিনি কোর্টে যাবেন না। এই ধরনের অবস্থা আজ বাংলাদেশে চলছে। নিজেরা আদালতের মর্যাদা লঙ্ঘন করছেন। এর ফলাফল এই দাঁড়াবে— ভবিষ্যতে তাহলে আর কেউ আদালতও মানবে না, এই অবস্থায় চলে যাবে। আামি এইটুকুই আশ্বস্ত করতে চাই, এই জঙ্গী কর্মকাণ্ড যখন থেকে শুরু করেছে আমরা তা মোকাবেলা করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি, নিচ্ছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী সংস্থা গত দুই মাস ধরে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। বাংলাদেশের মানুষও এই ধরনের জঙ্গিবাদী তৎপরতা পছন্দ করছে না। এমনকি তারা নিজেরাও যারা পেট্রোলবোমা মারতে যাচ্ছে সাথে সাথে এদের ধরিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না বিএনপি নেত্রী কেন কোর্টে গেলেন না। উনার নাকি নিরাপত্তার অভাব। এটাই আমি শুনেছি। আইনজীবীদের মাধ্যমে তিনি এটাই বলেছেন। উনাকে ওখানে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে- যিনি মানুষ খুন করছেন, মানুষ হত্যা করছেন, পেট্রোলবোমা মারাচ্ছেন, তারই নিরাপত্তা দিতে হবে আমাকে। কী দুর্ভাগ্য চিন্তা করে দেখেন। তার পরও যাতে আইনের শাসনটা চলে সেভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরও তিনি যান না। আইনে যেটা আছে সে মোতাবেকই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘আমার যেটা মনে হচ্ছে, যেহেতু উনার মানুষ খুন করা, জঙ্গি তৎপরতার জন্য আজকে মানুষের কাছে তিনি ঘৃণ্য এবং মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, ফলে উনি মানুষের কাছে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। মানুষের সাথে এত দুর্ব্যবহার এবং মানুষ হত্যা করে এমন একটা পরিস্থিতিতে চলে গেছেন যে নিজেকে তিনি নিজেই তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘যখন নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ চাইল, পুলিশ দেওয়া হল। তখন বলা হল, কেন পুলিশ দেওয়া হল? পুলিশ দিয়ে নাকি তাকে অবরুদ্ধ করা হল। পুলিশ সরিয়ে দেওয়া হল, তখন বলা হল, পুলিশ কেন সরানো হল? তার নিরাপত্তার অভাব। আমরা যাব কোথায়? আপনি যাই করেন সেখানে একটা কিন্তু খুঁজে বেড়ায়। বাস্তবতা এখন- তিনি জানেন যে কীভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছেন। ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। তারা শান্তিতে পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাদের পরীক্ষার পথ বন্ধ করেছেন তিনি। এখন প্রতিটি কর্মদিবসে হরতাল দিয়ে সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনীর বিচার দেশের প্রচলিত আইন অনুয়ায়ী হবে। আইন-আদালতের কেউ যদি অবমাননা করে কোর্ট যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবেই তার পদক্ষেপ ও বিচার হবে। সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটা বিষয় এখন আমার মনে হচ্ছে, উনি যেহেতু এই ধরনের গণহত্যা চালিয়ে জঙ্গিবাদী তৎপরতার চালিয়ে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে চলেছেন, মানুষকে ভয় পাচ্ছেন। এখন উনি বোধহয় ভাবছেন যে, কারাগারই হচ্ছে উনার সব থেকে নিরাপদ জায়গা। উনি বোধহয় নিজেইে চাচ্ছেন যে, উনাকে এ্যারেস্ট করা হোক আর কারাগারে প্রেরণ করা হোক। আর উনার তো এ ধরনের নাটক করার অভ্যাস আছে। সেটা এরশাদ সাহেব ভাল জানেন, পূর্বাণী থেকে কীভাবে বের করেছিলেন। কাজেই ওই ধরনের নাটুকেপনা করার অভ্যাস আছে। তিনি ওই ধরনের একটি নাটুকেপনা করে একটু বিদেশী প্রচার-প্রচারণায় যাতে আসতে পারেন সেই চেষ্টা এবং যাতে সিমপ্যাথি পেতে পারেন সেই চেষ্টাটাই বোধহয় করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পত্রিকায় একটু ভাল পাবলিসিটি পাওয়া আর শিরোনাম হওয়া বোধহয় উনার শেষ ইচ্ছা। সেই ইচ্ছাই বোধহয় উনি পোষণ করছেন। নইলে নিজেই নিজের রুমের মধ্যে অফিসে বসে আছেন। সেখানে বিদেশীরা যাচ্ছে। উনার নেতাকর্মী যদি না যায়, উনার জন্য যদি কোনো মানুষ না দাঁড়ায়, উনার কথায় যদি কেউ না আসে, তাহেল আমাদের কী দোষ? কারণ তার এই ধরনের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড কেউ সমর্থন করছেন না। বাংলাদেশের মানুষ সমর্থন করবে না এবং উনার দলের লোকও সমর্থন করে না।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘ইতোমধ্যেই উনার দলের সাবেক অনেক এমপিসহ অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কেউ উনার এ সমস্ত কর্মকাণ্ড পছন্দ করেন না। বাংলাদেশের মানুষ শাস্তি চায়। নিরাপত্তা চায়। উনি এখন জনবিচ্ছিন্ন। এখন উনার একটু পাবলিসিটি চাই। আর এই জনবিচ্ছিন্ন থেকে বাঁচার জন্য বোধহয় উনি নাজিম উদ্দিন রোড বেছে নিয়েছেন। ওটায় যেতে পারলে বোধ হয় উনার একটু নিরাপদ মনে হচ্ছে। আদালত যে নির্দেশ দেয় সেই নির্দেশ মোতাবেকই চলতে হবে। কারণ আমরা সব সময় আদালত বা আইনের শাসনকে সম্মান করি।’