তিন কারণে ঝুঁকিপূর্ণ খালেদার গ্রেফতার
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে সরকার। ঝুঁকির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে, খালেদা গ্রেফতার হলে ২০ দলের নিস্তেজ হওয়া আন্দোলন গতি ফিরে পেতে পারে। দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবেন খালেদা। ইমেজ বেড়ে যাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের। এতে করে নতুন ঝামেলায় পড়তে হতে পারে সরকারকে।
সরকারের উচ্চমহল মনে করছে, আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু গ্রেফতার করা হলে বন্দী খালেদা শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। জেনে-বুঝে তাকে এ সুযোগ করে দেওয়া ঠিক হবে না। এটি পরবর্তীতে সরকারের জন্যে ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
গত কয়েক দিন ধরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের আলাপ-আলোচনায় এ সব বিষয়ই ঘুরেফিরে এসেছে। ওই সব বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ সব তথ্য দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন। ওই বৈঠকগুলোতে আরও আলোচনায় এসেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা গ্রেফতার হলে আন্তর্জাতিক শাক্তিগুলো সরকারের বিপক্ষে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১৬ দেশের কূটনীতিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করায় সরকারের এ আশঙ্কা বেড়েছে।
সরকারের ভেতরের একটি অংশ মনে করে, বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হলে গণতান্ত্রিক সরকারের সবচেয়ে বড় অগণতান্ত্রিক আচরণ প্রমাণসহ বেরিয়ে পড়বে। এর মধ্য দিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, যা সরকারের জন্যে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গ্রেফতারের সব আয়োজন সম্পন্ন হলেও মূলত এ তিন কারণে পিছু হটতে হচ্ছে সরকারকে।
বিএনপির নিস্তেজ আন্দোলনকে পুঁজি করতে খালেদা নিজেও গ্রেফতার হতে চান বলে মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন মন্ত্রী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেফতার হওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সরকার তাকে এখনই গ্রেফতার করে ফাঁদে পা দেবে না। দিতে চাচ্ছে না। তাই সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করতে চাইছে না। এক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা অনুসরণ করছে সরকার।
গ্রেফতার প্রসঙ্গে দলের তিনজন শীর্ষ নেতা নিশ্চিত করেন, খালেদা গ্রেফতার হতে চান তার একটি মাত্র কারণ- আন্দোলন নিস্তেজ হয়ে গেছে। তাই নিজে কারাবরণ করে সেটি কাটিয়ে তুলতে চান খালেদা। কারণ এতে সুফল খালেদার ঘরেই যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদাকে আইনী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায়। সূত্রটি আরও নিশ্চিত করে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা, জনমনে বিরূপ প্রভাব ও কূটনীতিক চাপের ফলে আদালতের নির্দেশের পরও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করছে না সরকার।
সরকারি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আপাতত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। তবে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবেনই। সেটা সময়-সুযোগ ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে। ওই সূত্রটি আরও জানায়, গ্রেফতার কার্যক্রমে ধীরগতি অনুসরণ ও কয়েক ধাপে হতে পারে এবং ভিন্ন কৌশলে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলেন, খালেদা নিজেই নাজিমউদ্দিন রোডে থাকতে চান। জনরোষ থেকে তিনি বাঁচতে চান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কারাগারকেই নিরাপদ জায়গা মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, এ জন্য তিনি আদালতে হাজিরা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেফতার হতে চান।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে থাকলেও আইনের দৃষ্টিতে এখন তিনি পলাতক। আদালত গ্রেফতারের আদেশ দেওয়ার এক সপ্তাহ গত হলেও আদেশের কপি পুলিশ ‘পায়নি’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘খালেদার আন্দোলন এখন অনেকটাই ফ্লপ। ত্যক্ত-বিরক্ত সাধারণ মানুষ তাকে অনেকটাই প্রত্যাখ্যান করে নিজ নিজ কাজে নেমে পড়েছে। এই মুহূর্তে তাকে গ্রেফতার করা মানে তার ইমেজ বাড়িয়ে দেওয়া। সরকার কেন এই দায়িত্ব নেবে?’
আওয়ামী লীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘বিএনপির চলমান আন্দোলন সরকার সফলভাবে দমন করতে যাচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করে কেন সরকার বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাবে?’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জনরোষ থেকে বাঁচতে খালেদা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে চান। এ জন্য তিনি আইন-আদালত সবই অবমাননা করছেন।
তিনি আরও বলেন, নাশকতা করে তো তিনি (খালেদা জিয়া) রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন। ধীরে ধীরে সবই হারাবেন। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়ে ‘হিরো’ হওয়ার দুঃস্বপ্ন দেখছেন। তিনি জিরো হয়ে আছেন জিরোই থাকবেন।