‘সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান’

BNPসংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় ব্যবস্থা বর্তমান সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এ ব্যবস্থায় ভোট জালিয়াতি প্রায় অসম্ভব। আর এ ব্যবস্থা চালু হলে তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভাজন কমিয়ে আসবে।
রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে শনিবার বক্তারা এ সব কথা বলেন। ‘রিথিংকিং ডেমোক্রাটাইজেশন : কনসেনসাস বিল্ডিং ফর রেজাল্ট’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল সায়েন্স এ্যাসোসিয়েশন (আইপিএসএ)।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় যদি কোনো প্রার্থী ১০ বা ৫ ভোটেও যদি এগিয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচিত হয়ে যায়। ফলে এখানে সূক্ষ্ম, স্থূল বহুরকম কারচুপি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে ৯ কোটি ভোটের মধ্যে ১ শতাংশ ভোট জালিয়াতি করা মানে ৯ লাখ ভোট জালিয়াতি করা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে হবে। এ বিষয়ে জোর দেওয়ার কারণ হলো, বাংলাদেশে যে সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক না কেন সেটা অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। তার কারণ হলো নির্বাচন সংঘটিত হয় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। তবে আরও কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আর এ কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে রাজনীতি এমনভাবে ঢুকে গেছে যে, তা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কষ্টকর।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ করে সব পরিবর্তন করা যাবে না। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যস্থায় যা রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে। সাংবিধানিক পদে নিয়োগে পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দিতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। উচ্চকক্ষ বা নিম্নকক্ষ নিয়ে ভাবার আগে এগুলোতে জোর দিতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া নিতে হবে। এ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গুরুতর প্রচেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন লক্ষ্য ও কৌশল প্রায় একই। তবে দুটি দলই নির্বাচন প্রক্রিয়ার শিকার। অসাংবিধানিক সরকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করানো হলে তা পক্ষপাতিত্ত্বমূলক এবং অনাস্থার জন্ম দেয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ, দক্ষ এবং নির্দলীয় নির্বচান কমিশন গঠন দুই দলেরই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্য দরকার গণতান্ত্রিক পন্থায় অহিংস বিরোধিতার সুযোগ নিশ্চিত করা।’
অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘সমস্যাগুলো রাজনৈতিক। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরই এ সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। সদিচ্ছা এবং দূরদৃষ্টি থাকলে এগুলো সমাধান হবে।’
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনকালীন এমন সরকার হতে হবে যার ওপর সবারই আস্থা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন এবং আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। আর যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যে আসতে হবে, যাতে এ বিচার দ্রুত শেষ হয়।’
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. রওনক জাহান, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান, অধ্যাপক আতাউর রহমান, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর প্রমুখ। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপিএসএর চেয়রাম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান খান।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend