কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের শুনানি সোমবার
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের শুনানি সোমবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রবিবার রিভিউ শুনানির জন্য আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। সোমবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চের কার্যতালিকায় আবেদনটি আসবে বলে জানানো হয়েছে।
কামারুজ্জামানের রিভিউটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করতে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই দিন ধার্য করেন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানির আবেদনটি আগামীকাল (সোমবার) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।’
এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘রিভিউয়ে বিস্তারিত শুনানির কোনো অবকাশ নেই। মূল রায়ে আদালতের যদি কোনো ভুল থাকে, তাহলে শুধু তা দেখিয়ে দিতে পারে।’
যারা কামারুজ্জামানের রায় দিয়েছিলেন সেসব বিচারপতিরাই রিভিউ শুনানি গ্রহণ করবেন বলেও জানান মাহবুবে আলম।
এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেলে কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তবে সেটি রায় কার্যকরের দিন নির্ধারণের সময় অথবা রায় কার্যকরের দিনের কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে করতে হবে।’
এর আগে, গত ৫ মার্চ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দায়ের করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা।
পরে এ বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে ৪৪টি যুক্তি আনা হয়েছে। মূল ৪৫ পৃষ্ঠার আবেদনে মোট ৭০৪ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘বিদেশের বিভিন্ন আদালতে দেখা যায়, কোনো আসামীর ফাঁসির পর পরবর্তী বিচারে প্রমাণিত হয় তিনি নির্দোষ ছিলেন। আমাদের দেশে যেন তেমনটা না ঘটে, সে জন্য আদালতের কাছে আমরা বিনীত আবেদন করব রিভিউয়ের মাধ্যমে যেন সঠিক বিচার হয়।’
তিনি বলেন, ‘রিভিউ শুনানীর ক্ষেত্রে যেন তাড়াহুড়া না করা হয় এবং আসামীপক্ষকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়। আমরা আশা করি, আদালত সে সুযোগ দেবেন।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি, কামারুজ্জামানের সাক্ষ্য প্রমাণের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি।’ সেগুলো সঠিকভাবে বিবেচনা করে তিনি খালাস পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন এ সিনিয়র আইনজীবী।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ চারজন বিচারপতির স্বাক্ষর শেষে সর্বমোট ৫৭৭ পৃষ্ঠার রায়ের কপি প্রকাশ করা হয়।
ওই দিন রাতেই পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপিসহ লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।
গত বছরের ৩ নভেম্বর বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সোহাগপুরে গণহত্যার দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বিভক্ত রায় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
২০১৩ সালের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।