আরেকটি লজ্জা, জুয়ার আসরে দুর্জয়
বিক্রম বেতালের মতো ক্যাসিনো ভূত চেপে বসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাঁধে। এই ভূত যেন ঘটনার পরম্পরার থাকছেই। এবার সরাসরি জুয়ার আখড়ায় দেখা গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম পরিচালক এবং বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয় এমপিকে। প্রাপ্ত ভিডিওতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের অভিষেক টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ককে ধ্যান-মগ্নভাবে ক্যাসিনোর জুয়ার আসরে খেলতে দেখা গেছে। এই সময় তার পাশে একজন বিদেশী এবং একজন মহিলাকেও দেখা গেছে। এই ঘটনা প্রকাশ যখন হচ্ছে, ঠিক তার ১৩ ঘণ্টা পরই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ মিশন বাঁচিয়ে রাখার কঠিন লড়াইয়ে মাঠে নামছে। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ইংল্যান্ড। তবে এ ব্যাপারে আইসিসি কিংবা বিসিবির কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। কিংবা ঘটনা ফাঁস হয়নি।
নাঈমুর রহমান দুর্জয় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলের অন্যতম ত্রাতাও তিনি। অথচ ক্রিকেট দল নয়, তিনি এখন ব্যস্ত জুয়ার আসরে। কয়েক দিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সফরসঙ্গী হয়ে নিউজিল্যান্ড গিয়েছেন। খেলার মাঠেও তিনি যাচ্ছেন। কিন্তু কেন তিনি ক্যাসিনোতে গিয়েছেন এই নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। বিসিবির খরচে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া তার মতো একজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বকে জুয়ার আসরে দেখতে পাওয়া জাতির জন্য বেজায় লজ্জাকর।
গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে জুয়ার বোর্ডেই দেখা গেছে। তিনি বসে রয়েছেন। খেলছেন। চোখ রাখছেন টাকার চক্করে। তার পাশে একজন বিদেশী ভদ্রলোককেও দেখা গেছে। মাত্র ৩৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শেষ দিকে দেখা গেছে, ওই বোর্ড থেকে একজন মহিলা উঠে যাচ্ছেন। বিদেশের অবকাশ যাপনে অনেক কর্তা-মহাকর্তারাই বিনোদন হিসেবেই ক্যাসিনোতে যান। কিন্তু একটি দেশের দায়িত্ব নিয়ে বিদেশ সফরকালে এভাবে ক্যাসিনোতে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এক বিব্রতকর ঘটনা।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার-কর্মকর্তারা একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। বিতর্ক সূচনা হয়েছিল পেসার আল আমিন হোসেনকে দিয়ে। ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গভীর রাত অবধি হোটেলের বাইরে ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আইসিসির রীতি অনুযায়ী তাকে দেশে ফিরাতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু ক্যাসিনো ভূত যেন পিছু ছাড়েনি। আল আমিন ইস্যু শেষ হতে না হতেই বিসিবির পরিচালক এবং ক্রিকেট দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের বিরুদ্ধেও ক্যাসিনোতে যাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন মেলবোর্নের একটি ক্যাসিনোতে কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন খালেদ মাহমুদ। ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি জুয়ার আসরের সামনে দাঁড়িয়ে খালেদ মাহমুদ কথা বলছেন। জুয়ার আখড়া হিসেবে পরিচিত এই স্থানে যাওয়ার ঘটনায় এর আগে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক মঈন খানকে সমালোচনার মুখে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর খালেদ মাহমুদ সুজন নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আল আমিন একজন খেলোয়াড়; তার জন্য অবশ্যই নিয়মনীতি রয়েছে। নিয়মনীতি সম্পর্কে আমি ভালোই অবগত আছি। আমার খাওয়ার দরকার ছিল, খেতে গিয়েছি। দলের ম্যানেজার হিসেবে আমার কাউকে বলতে হবে, তা মনে করি না।’ তবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যে ছবি ছাপানো হয়েছে, তাতে সুজনের কথার সত্যতা মিলে না। তবে খালেদ মাহমুদ জুয়া খেলার কথা অস্বীকার করেছেন। মিডিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘খেলার পর তো আমরা খেতে যাই। সেখানে গিয়েছিলাম খেতে।’ তিনি যোগ করেছেন, ‘আমি তো আর দলে খেলি না। আমার কারণে দলে প্রভাব পড়বে, এমন কিছু নয়। আমার সম্পর্কে খেলোয়াড়দের ভাল ধারণা আছে। আমি মনে করি না, এটা অনেক বড় ইস্যু। আসলে খাওয়ার জায়গার সঙ্গেই ওই ক্যাসিনো।’ খালেদ মাহমুদ সুজন ইস্যুতে বিসিবি কোনো অফিসিয়াল ব্যাখ্যা দেয়নি। ৮ মার্চ ফের প্রকাশ পেয়েছে দুর্জয়ের ঘটনা। হয়তো এবার নাঈমুর রহমান দুর্জয়কেও ব্যাখ্যার কাঠ গড়ায় দাঁড়াতে হবে। বিষয়টি বিসিবির প্রেসিডেন্টের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।
এ ব্যাপারে বিসিবির পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। দেশের যারা বিসিবির নেতৃত্বে রয়েছেন তারা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক পরিচালক দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এই ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। তবে যদি অভিযোগ সত্যি হয় তা হলে এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
ক্যাসিনোতে যাওয়ার ঘটনায় হয়তো তেতে উঠতে পারে আইসিসি। কারণ এখানে বোর্ডের লেনদেনের চাইতে ম্যাচ গড়াপেটার ঘটনাও থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— নাঈমুর রহমান জুয়ার আখড়ায় কি স্রেফ টাকার চক্করেই মগ্ন ছিলেন, নাকি জুয়াড়িদের খপ্পরে পড়েছেন, তার উত্তর তাকেই দিতে হবে।