অভিজিৎ হত্যা- হুমকিদাতা ১০ জনের তালিকা পেয়েছে ডিবি
ফারাবী ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিজিৎ রায়কে হত্যার হুমকিদাতা ১০ জনের তালিকা পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে রবিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সব কথা বলেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার সন্দেহভাজন প্রধান আসামী শাফিউর রহমান ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকারীদের তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই তালিকার ভিত্তিতে গ্রেফতারে অভিযানও শুরু হয়েছে। ফেসবুকে ফারাবী ছাড়া ১০ জন বিভিন্ন সময় অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেককে পেশাদারি প্রক্রিয়া বজায় রেখেই গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কারা হত্যা করেছে ডিবি এখনো সেটা নিশ্চিত হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছি। এটা উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কাজ।
যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ইতোমধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি সংগঠন হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তবে আমরা মনে করছি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি হত্যাকাণ্ড করতে পারে। এ ছাড়া কেউ কেউ আবার আইএসকেও সমর্থন করে। এদের মধ্যেই কেউ না কেউ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড তদন্তে এফবিআই সন্তোষ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা (এফবিআই প্রতিনিধি দল) আমাদের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা আমাদের আরও সহায়তা করবেন। প্রয়োজনে তারা আরও কয়েক দিন বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। ইতোমধ্যে আমরা এফবিআইয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়েছি।’
শাফিউর রহমান ফারাবী
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ‘তদন্ত কাজে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই টিম এসেছেন। তারা আমাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। আমরা কী তদন্ত করছি, কী চিন্তা করছি, এগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তারা ঘটনাস্থলের বর্ণনা শুনেছেন, তারা নিজেরাও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। অভিজিতের বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। আলামত সংগ্রহকারী সিআইডি ও ডিবির ক্রাইম সিনের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছেন।’
শাফিউর রহমান ফারাবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু এ্যাসোসিয়েটের (সহযোগী) নাম পাওয়া গেছে। ফারাবী অভিজিৎকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে তারাও এ্যাগ্রেসিভ ও আপত্তিকর কমেন্ট করেছে। তাদের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে।
তিনি জানান, ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস ও উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তবে ঘটনাস্থলে থেকে এবং যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের সঙ্গে ফারাবীর সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।
এফবিআই ফারাবীর সঙ্গে কথা বলেছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কথা বলেনি। তারা সরাসরি কথা বলতে পারবে না। তবে আমাদের মাধ্যমে প্রয়োজনে কথা বলবে।
হত্যাকাণ্ড তদন্তে ঢাকায় এসেছে এফবিআই প্রতিনিধি দল
এফবিআইয়ের সঙ্গে অভিযানে যাবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামী শনাক্তের পর আমরাই গ্রেফতার করব। আসামী বিপজ্জনক হলে আমাদের বিশেষ টিমের সহায়তা নেওয়া হবে। এফবিআইয়ের সরাসরি অপারেশনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা যদি কোনো আসামী শনাক্ত করে থাকে, তাহলে আমরা তাকে গ্রেফতারের নিশ্চয়তা দেব।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হামলার ঘটনায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ গুরুতর জখম হন।
খুনের ঘটনায় অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কোনো আসামীর নাম বা কোনো কারণ উল্লেখ করেননি।
২ মার্চ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শাফিউর রহমান ফারাবীকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গত বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সহায়তার জন্য ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় পৌঁছে।