কূটনৈতিক চ্যানেলে বিএনপিকে সরকারের দুই প্রস্তাব
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিশীলতা ও সহিংসতা বন্ধ করতে কূটনীতিকদের মাধ্যমে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে দুটি শর্ত দিয়েছে সরকার। শর্ত দুটি মানলে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে এই শর্তযুক্ত প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির মনোভাব এখনো সরকারকে জানাননি কূটনীতিকরা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম রবিবার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ তথ্য জানান।
একাধিক কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা, রাজনৈতিক সঙ্কট ও সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। চলমান সহিংসতা বন্ধ, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ঢাকায় অবস্থিত ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের ১৬টি মিশন উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কূটনীতিকদের দেখা করার চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেননি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি রবিবার বলেন, ‘না, ওই ১৬ দেশের কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা কখনও বলেননি। বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিয়ে কূটনীতিকরা সরকারের সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে আলাপ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং আমি তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। এ সময় পররাষ্ট্র সচিবও উপস্থিত ছিলেন।’
কী আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা জানতে চেয়েছেন, সহিংসতা কবে বন্ধ হবে। তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট (প্রমাণপত্র) দিয়ে বলেছি, এগুলো বিএনপি-জামায়াতের কাণ্ড। তবে সরকারের হাতে এখনো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সহিংসতা আগে থেকে অনেক কমেছে। বাংলাদেশকে সহিংসতাশূন্য করা হবে। এর জন্য আরেকটু সময় দিতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কূটনীতিকদের মাধ্যমে কী প্রস্তাব দিয়েছেন- জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কই না তো, কূটনীতিকরাতো বিএনপি নেতার কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু বলেননি।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কূটনীতিকরা দেখা করার আগে সরকারের সম্মতি নিয়ে দেখা করেছে- এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কূটনীতিকরা সরকারকে সংলাপের আহ্বান জানাতে বলেছেন। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি, কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকার সংলাপে বসবে না।’
মো. শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘কূটনীতিকরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশীদের বলা হয়েছে, বিএনপি দুটি শর্ত মানলে সংলাপের আহ্বান করবে সরকার। এক. জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে। দুই. সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। এর পর কূটনীতিকরা আর কিছুই জানাননি।’
তাহলে কি কূটনীতিকদের উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কূটনীতিকরা কী উদ্যোগ নিচ্ছে তা উনারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে সরকার সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কখনই সংলাপে বসবে না। এটা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার পরই জানিয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে গত সপ্তাহে কূটনীতিকরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠক প্রসঙ্গে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম বলেন, ‘কূটনীতিকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তারা (কূটনীতিকরা) একটি বিবৃতি দেবেন। তারা তা দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত সপ্তাহে বৈঠক শেষে সবগুলো (১৬টি) দেশের পক্ষে ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন থেকে গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের মনোভাব প্রকাশ করা হয়।
ওই বার্তায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছি। একই বিষয়ে গত ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা চলমান সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছি। বাংলাদেশের জনসাধারণের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা অর্জনের পথ বের করতে হবে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে।’
কূটনীতিকদের মাধ্যমে বিএনপিকে সরকারের দেওয়া দুই শর্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম বলেন, ‘মূল দাবি থেকে সরে আসতে এবং জনগণকে ভ্রান্ত করতে সরকারের এটা একটা কৌশলমাত্র। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। আমরা ক্ষমতা চাই না, জনগণের ভোটের অধিকার ফেরত চাই।’
এম এ কাইয়ুম বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের এ্যালায়েন্স (জোট) আছে। জামায়াত সম্পর্কে আমরা বহুবার ব্যাখ্যা দিয়েছি। নতুন করে বলার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায়, তারা কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না? আগে কেন তারা জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেছে? ১৯৯৬ সালে কেন জামায়াতকে নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করেছে? এরশাদের সময়ে কেন আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে?’