জয়কে অপহরণ চেষ্টা নিয়ে সংসদে আলোচনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদে। ষড়যন্ত্রে জড়িতদের খুঁজে বের করতে বাংলাদেশে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়েছেন সরকারি ও বিরোধীদলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা।
দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে রবিবার রাতে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে ৫ লাখ ডলার ঘুষ প্রদানের চুক্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাসাসের এক নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার ধরা পড়েছে এবং বিচারে তার কারাদণ্ড হয়েছে। আর সিজার নিজেই আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে সে এ কাজটি করেছে। এ ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আমাদের দেশে বিচার হলে বলা হতো রাজনৈতিক। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রমাণ হয়েছে, জড়িতদের শাস্তি হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ড জড়িত। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ধ্বংস করতে বার বার চেষ্টা হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্রের সঙ্গে পাকিস্তানের আইএসআই আর তাদের এদেশীয় এজেন্ট খালেদা জিয়া জড়িত। তরুণ প্রজন্মের অহংকার সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা করে কুখ্যাত তারেক রহমানের পথকে পরিষ্কার করার জন্যই এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপির হাইকমান্ডটি কে? কে অর্থের জোগান দিয়েছে, নেপথ্যে কে রয়েছে- তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। খালেদা-তারেকের ষড়যন্ত্র শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বিস্তৃত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবারও খালেদা জিয়া হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়া যে জড়িত ছিল, এ ঘটনা তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
জাসদের মঈনউদ্দীন খান বাদল বলেন, যুগে যুগেই মীরজাফরদের জন্ম হয়। জিয়া সরাসরি মীরজাফরদের বংশধর কি না জানি না, তবে একাত্তরে এবং ১৫ আগস্টের ঘটনার আগে জিয়া কী করেছে তা তদন্ত করা উচিত। বাবা (জিয়াউর রহমান) ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, মা (খালেদা জিয়া) ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, আর আজ সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করার সঙ্গেও জড়িত সেই মা-ছেলে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান।
তিনি খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, চোখের সামনেই খুনি দাঁড়িয়ে আছে অথচ আমরা শুধু বক্তৃতা দিয়েই যাচ্ছি। খুনিকে সুযোগ দিলে সে তার উদ্দেশ্য হাসিল করবেই। যা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘটনায় আবারও প্রমাণ হয়েছে। গণতন্ত্রের সহনশীলতা দেখাতে গিয়ে আমরা ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট দেখেছি। আর নয়। এই খুনি পরিবারের গ্যাংগ্রিনকে অপসারণ করতেই হবে।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িতরা গত ২৭ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে; অথচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জাতিকে কোনকিছু জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করার ঘটনায় আদালতে জড়িতদের সাজাও হয়েছে, কিন্তু সংসদে মন্ত্রীরা কোন বিবৃতি দেননি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও ঘটনার তদন্ত করা উচিত।
সংসদ সদস্যদের দাবির প্রতি একমত পোষণ করে স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রটি খাটো করে দেখলে চলবে না। আইন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রায়ের কপি এনে তা পর্যালোচনা করা। প্রয়োজনে তদন্ত করে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা ও বিচারের মুখোমুখি করা।
আলোচনায় আরও অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।