রিয়াদের ব্যাটে বাংলাদেশের প্রথম ‘বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি’
আক্ষেপ ঘুঁচে গেছে বাংলাদেশের; এতদিন বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না বলে আক্ষেপে পুড়তে হচ্ছিল ১৬ কোটি বাংলাদেশীকে। অবশেষে সোমবার সেই আক্ষেপ-আফসোস ঘুঁচিয়ে দিয়েছেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশকে উপহার দেওয়া সেঞ্চুরিটি রিয়াদের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচটিতে ৪৫.৪ ওভারে রানআউট হওয়ার আগে রিয়াদ খেলেছেন ১৩৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংস, যা কোয়ার্টার ফাইনালের ছাড়পত্র যোগাড়ের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে বাংলাদেশকে দিয়েছে লড়াই করার মতো পুঁজি।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ২.১ ওভারে দলীয় মাত্র ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবালের উইকেটটি হারানোর পর ক্রিজে এসেছেন রিয়াদ। ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তিনি। এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে ১১৩ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে রিয়াদের নামের পাশে লেখা ছিল ১২টি হাফসেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল অপরাজিত ৪২ রানের। সোমবার তাই ঐতিহাসিক এক সেঞ্চুরি করে নিজেকেও ছাড়িয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
১৯৯৯ সালের পর থেকে টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যানই সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ১৬ বছর পর এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এর আগে বিশ্বকাপে (চলতি আসরের আগে) ১৩ হাফসেঞ্চুরি ছিল টাইগারদের, ছিল না সেঞ্চুরি। কিন্তু সোমবার প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন রিয়াদ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে; প্রত্যাশ পূরণ করেছেন রিয়াদ। অথচ তার ওপর লাইমলাইট ছিল না। প্রত্যাশার পারদ ছিল তামিম-সাকিব-এনামুলদের কাছে। তারা যখন ব্যর্থ তখন নায়কের ভূমিকায় রিয়াদ।
সেঞ্চুরির পাশাপাশি ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এসেছে রিয়াদের ব্যাট থেকে। এর আগে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম প্রত্যেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রান করেছেন। শুধু তাই নয়, এ দিন মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গী করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটিরও (১৪১ রান) রেকর্ড গড়েছেন রিয়াদ।
এর আগে গ্রুপপর্বের গত ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার সুযোগ এসেছিলেন তামিম ইকবালের সামনে। কিন্তু ৯৫ রানে আউট হওয়ায় সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এই ম্যাচের আগে চলতি আসরসহ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মোট হাফসেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল ২০টি, ছিল না কোনো সেঞ্চুরি।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৩টি সেঞ্চুরি এসেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৯ বলে ৬৪ রান করেছিলেন মেহরাব হোসেন অপি। ওই আসরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু খেলেছিলেন ১১৬ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচেও নান্নু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস খেলেছেন।
২০০৩ বিশ্বকাপে একমাত্র হাফসেঞ্চুরিটি এসেছে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাট থেকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮২ বলে ৫৬ রান করেছিলেন তিনি।
২০০৭ সালে সর্বোচ্চ ৭টি হাফসেঞ্চুরি এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। তামিম ইকবাল ভারতের বিপক্ষে ৫৩ বলে করেছিলেন ৫১ রান। একই ম্যাচে সাকিব আল হাসান ৮৬ বলে ৫৩ রান ও মুশফিকুর রহিম ১০৭ বলে অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। শুধু ভারতের বিপক্ষে নয়, সাকিব হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও। ৯৫ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৩ বলে মোহাম্মদ আশরাফুল ৮৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এটাই ছিল চলতি আসরের আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ স্কোর।
২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ৪ ব্যাটসম্যান হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষে ৮৬ বলে ৭০ রান এসেছিলে তামিমের ব্যাট থেকে। একই ম্যাচে ৫০ বলে ৫৫ রান করেছেন সাকিব আল হাসান। এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ১০০ বলে ৬০ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস। এরপর নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ইমরুল কায়েস।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬ ব্যাটসম্যান হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিব ৬৩ ও মুশফিক ৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাব্বির রহমান রুম্মন ৫৩ রানের ইনিংস খেলেছেন; স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৪ ব্যাটসম্যান হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। তামিম ইকবাল ৯৫, রিয়াদ ৬২, মুশফিক ৬০ ও সাকিব ৫২ রান করেছেন। আর সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিক। সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।