অভিজিৎ হত্যা: এফবিআই যেভাবে সন্দেহভাজন অপরাধীর ছবি আঁকে
অজ্ঞাত অপরাধী, তাঁর ছবিও স্কেচ করে এফবিআইসহ উন্নত দেশের গোয়েন্দা বা পুলিশের বিশেষ বিভাগ। এরজন্য রয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সফটওয়্যার। আর এই স্কেচ করতে প্রয়োজন হয় প্রত্যক্ষদর্শী যারা অপরাধীকে দেখেছেন। বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য হলে সেই স্কেচ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশও করেন তারা। ঢাকায় অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডের তদন্ত সহায়তায় আসা এফবিআই সদস্যরা হত্যাকান্ডে জড়িত সম্ভ্যাব্য সন্দেহভাজেনদের ছবি এঁকেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক কৌতুল সৃষ্টি হয়েছে।
এই ধরণের ছবিকে বলা হয় ফেসিয়াল কম্পোজিট(Facial Composite) বা সম্ভাব্য মুখাবায়ব চিত্র। এই স্কেচ করার জন্য প্রথম শর্ত হল অপরাধের সময় অপরাধীর প্রত্যক্ষদর্শী থাকা। এক বা একাধিক। তদন্ত বিশেষজ্ঞরা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে অপরাধীদের তারা যেমন দেখেছেন তাঁর নিখুুঁত বর্ণনা নেন। আনুমানিক বয়স, উচ্চতা, গায়ের রং, শারীরীক বৈশিষ্ট্য, মুখ,নাক, চোখ, চোখের রং, চুল, দাড়ি , গোফ, ভ্রু ও পোশাকসহ সবকিছুর বর্ণনা যতটুকু জানা যায়।
এরপর তারা সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেন। আর বিশ্লেষণের জন্য আছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। যদি প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক হন তাহলে তাঁদের কমন তথ্যগুলোকে বিশেষজ্ঞরা সর্বাধিক গুরুত্ব দেন তারা। এরপর তথ্যের ভিত্তিতে তারা সম্ভাব্য অপরাধীর স্কেচ তৈরি করেন হাতে। আর এরজন্য রয়েছে কম্পিউটার সফটওয়্যারও। একই তথ্য দিয়ে সফটওয়্যারের সহায়তায়ও স্কেচ করা হয়। তারপর দু’টো মিলিয়ে নিখুঁত করার চেষ্টা করা হয়। এখানে মুখাবয়ব বিনির্মাণ পদ্ধতি (Construction Methodology) ব্যবহার করা হয়।
এই স্কেচ চুড়ান্ত হলে প্রথম কাজ হল অপরাধীদের তথ্য ভান্ডারে থাকা ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা । যদি মিলে যায় তাহলেতো কথাই নেই। আর না মিললেও আরো কিছু বিষয় নিশ্চিত হয়ে অপরাধীর স্কেচ চুড়ান্ত করা হয়। আর এফবিআই সেই স্কেচ প্রকাশ করে। ধরিয়ে দেয়ার জন্য সংবাদ মাধ্যমে এবং তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে।
কেন্ট ও স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক গবেষণা এবং পড়ান হয়। আর যদি পর্যপ্ত তথ্য থাকে তাহলে এই পদ্ধতিতে আঁকা স্কেচ প্রায় শতভাগ নিখুঁত হয়।
ওকলাহামায় বোমা হামলা, সুইডেনে সিরিয়াল যৌন নিপীড়নকারী, ম্যানচেস্টারে সিরিয়াল ধর্ষকসহ আরো অনেক ঘটনায় এই পদ্ধতিতে অপরাধী চিহ্নিত হয়েছে এবং ধরা পড়েছে।
এফবিআই এখানো হাঁতে আকা স্কেচের ওপরই বেশি নির্ভর করে। তবে তারা এখন সফটওয়্যারও ব্যবহার করছেন। তবে যেখানে স্কেচ করার দক্ষ লোকের অভাব থাকে সেখানে প্রধানত সফটওয়্যার-এর ওপরই নির্ভর করা হয়।
অভিজিতের সম্ভাব্য ঘাতকের ছবি আঁকেনি এফবিআই
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের(ডিবি) প্রধান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রিয়.কমকে জানান,‘ এখন পর্যন্ত অভিজিৎ রায়ের হত্যাকীদের দেখেছে এমন কোন প্রত্যক্ষদর্শীকে আমরা খুঁজে পাইনি। এই হামলায় আহত অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তবে তাঁর সঙ্গে আমরা কথা বলিনি। আর তাঁকে এখন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাঠান হয়েছে।’
তিনি বলেন,‘ প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ছাড়া সম্ভাব্য অপরাধীর স্কেচ করা যায়না। ঢাকায় এফবিআই সদস্যরা অভিজিতের ঘাতকদের ছকি এঁকেছে বলে যে খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তা ঠিক নয়। তাঁরা কোন ছবি আঁকেননি। এপর্যায়ে আঁকাও সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন,‘ আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর খোঁজ করছি। আর রাফিদা আহমেদের সঙ্গেও এক সময় কথা বলা যাবে। তখন হয়তো সম্ভাব্য অপরাধীর ছবি আঁকা যাবে। আমরা এখন পর্যন্ত এটুকু নিশ্চিত হয়েছি যে, হত্যাকান্ডে দুজন অংশ নিয়েছে।’