ইংলিশদের কাঁদিয়ে কোয়ার্টারে বাংলাদেশ
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। সোমবার অ্যাডিলেড ওভালের মাঠে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়েছে মাশরাফিরা। সঙ্গে ১৬ কোটি বাংলাদেশীর স্বপ্ন পূরণ করেছেন তারা; ৫ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে যোগাড় করেছেন কোয়ার্টার ফাইনালের ছাড়পত্র।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো সেঞ্চুরি ছিল না বলে আক্ষেপ ছিল এতদিন। অ্যাডিলেডের মাঠে সেই আক্ষেপ ঘুঁচিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি আর মুশফিকুর রহিমের ৮৯ রানের ওপর ভর রেখে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে ২৭৬ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪৮.৩ ওভারে ২৬০ রানে অলআউট হয়েছে ইংলিশরা। এ জয়ে বল হাতে মূল অবদান রেখেছেন দলের পেসাররা। অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপির সঙ্গে ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে বিশ্বকাপ খেলাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল পেসার রুবেল হোসেনের। সোমবার তিনিই বল হাতে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের জয়ের নায়ক। ঠিক প্রয়োজনের মুহূর্তে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রো এনে দিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ড যখন জয় থেকে মাত্র ১৬ রান দূরে ঠিক তখনই ইংলিশদের শেষ দু উইকেট (৪৮ ওভারে প্রথম ও তৃতীয় বলে) তুলে নিয়েছেন তিনি। ম্যাচে ৯.৩ ওভার বল করে ৫৩ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন রুবেল। এ ছাড়া অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তাসকিন আহমেদ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
ইংলিশদের হয়ে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছেন ইয়ান বেল ও মঈন আলি। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের সূচনা করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অপর প্রান্তে তার সঙ্গী হিসেবে বোলিং শুরু করেছেন পেসার রুবেল হোসেন। ইনিংসের ৭.২ ওভারে দলীয় ৪৩ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ব্যক্তিগত ১৯ রানে রান আউট হয়েছেন মঈন আলি। এরপর ইয়ান বেল ও অ্যালেক্স হেইলস জুটি বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তবে ১৯.৫ ওভার হেইলসকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন যিনি, সেই ইয়ান বেলকে ব্যক্তিগত ৬৩ রানে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেছেন পেসার রুবেল হোসেন। একই ওভারে ইংলিশ অধিনায়ক ইওন মরগানকেও শিকার করেছেন রুবলে। এরপর ২৯.৪ ওভারে জেমস টেলরের উইকেট তুলে নিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। দলীয় ১৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে ইংলিশরা। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে তারা। তবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করা জস বাটলার বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ৪৬ ওভারে তাকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে ভারমুক্ত করেছেন তাসিকন। ওই ওভারের পরের বলেই রান আউট হয়েছেন ক্রিস জর্ডান। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন তখন ২টি উইকেট। ৪৯তম ওভারে সেই কাজটি করে দিয়েছেন রুবেল; উপড়ে ফেলেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসনের স্ট্যাম্প। ১৫ রানে ম্যাচ জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশ। উল্লাসে ভেসেছে ১৬ কোটি বাংলাদেশী।
এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। তবে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহিমের হাফসেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের পুঁজি পেতে সমস্যা হয়নি টাইগারদের। ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করেছে বাংলাদেশ। সঙ্গে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে খেলার প্রারম্ভেই পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিংয়ে নাকাল হয়েছে বাংলাদেশ। ভাল শুরুর আগে সাজঘরে ফিরেছেন তামিম ইকবাল (২) ও ইমরুল কায়েস (২)। তাদের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেছেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকার।
দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চরি করে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ (১০৩)। সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন তিনি। মূলত তার ব্যাটিংয়েই লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। ভাল খেলেছেন মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকার। মুশফিক ৮৯ ও সৌম্য ৪০ রান করেছেন। শেষ অবধি ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করেছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২৭৫/৭, ওভার ৫০ (মাহমুদউল্লাহ ১০৩, মুশফিকুর ৮৯, সৌম্য ৪০, তামিম ২, সাকিব ২; অ্যান্ডারসন ২/৪৫)
ইংল্যান্ড : ২৬০/১০, ওভার ৪৮.৩ (বাটলার ৬৫, বেল ৬৩, ওকস* ৪২; রুবেল ৪/৫৩, মাশরাফি ২/৪৮, তাসকিন ২/৫৯)
ফল : বাংলাদেশ ১৫ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)