টিভির পর্দা থেকে দৃষ্টি উৎসবে – হরতাল-অবরোধেও টিএসসিতে আনন্দের বন্যা
পশ্চিম আকাশে দিনের আলো ডুবতে বসেছে। দেশবাসীর দৃষ্টি তখন টেলিভিশনের পর্দায়। থমথমে পরিবেশে সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কী হতে যাচ্ছে, কী করবে বাংলার টাইগাররা। রুবেল হোসেনের ভয়াবহ বোলিংয়ে ইংলিশদের বিদায় ঘণ্টা বাজে। মুহূর্তেই টিএসসি এলাকার চেহারা পাল্টে যায়। টিভির পর্দা থেকে সবার দৃষ্টি ছুটে যায় উৎসবের দিকে। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি আর হই-হুল্লোড়। জনারণ্যে পরিণত হয় টিএসসিসহ এর আশপাশের এলাকা। ২০ দলীয় জোটের সোমবারের হরতাল-অবরোধের কথা যেন কারও মনেই ছিল না। সারাদেশের সঙ্গে আনন্দের বন্যায় ভেসে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার বিভিন্ন হল থেকে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে আনন্দ মিছিল বের হয়।। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, পাশের এলাকার তরুণ-তরুণীরাও এতে অংশগ্রহণ করেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
এ সময় তারা ব্যান্ড, বাঁশি বাজিয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলতে বলতে নাচানাচি করতে থাকেন।
ঢাবির জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী সুজন কুমার মণ্ডল বলেন, খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হল থেকে বের হয়ে টিএসসিতে এসেছি। অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের জয়কে উপভোগ করছি।
হরতাল-অবরোধের বিষয়টি এক্ষেত্রে বিবেচনায় রেখেছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। এই আনন্দ উদযাপনের সময় হরতাল-অবরোধের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
আজিমপুর এলাকা থেকে বাংলাদেশের জয় উদযাপন করতে বন্ধুদের সঙ্গে টিএসসিতে আসেন বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা সবাই আজিমপুরে মেসে থাকি। ঢাবিতে আমার অনেক বন্ধু আছে। মেসের সবাই মিলে ঢাবির মুহসীন (হাজী মুহম্মদ মুহসীন) হলে খেলা দেখছিলাম। সেখান থেকেই এখানে (টিএসসি) এসেছি।
তিনি বলেন, ক্লাস ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া হরতাল-অবরোধের মধ্যে বাইরে বের হই না। বাংলাদেশের জয় উদযাপনে এ বিষয়টি আপনি বলার আগে আমাদের কারও মাথাতেই ছিল না।
মনিরুল ইসলাম নামের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য আজ টিউশনিতে পর্যন্ত যাইনি। আর নামমাত্র হরতালের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে বাংলাদেশের জয় উদযাপন করব না, এর কোনো মানে হয়?
টিএসসিতে এই সময় দাযিত্বরত এএসআই মাজহারুল ইসলাম বলেন, অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই টিএসসি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশের জয়ে এখানে এই জনসমাগম উপলক্ষে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে টিএসসির পাশের এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশদের এদিকে নজর দেওয়ার জন্য পাশাপাশি থাকার কথা বলেছি।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জয় উপলক্ষে আমার অনুভূতি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মতোই। টিএসসি এলাকায় সব সময় পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ বলেন, শুধু ঢাবিতে নয়, সমগ্র বাংলাদেশ এই জয় উদযাপন করছে। এক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধ কোনো মাথাব্যথার বিষয় নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আনন্দ উৎসব উপলক্ষে তাৎক্ষণিক কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিংবা কোনো নির্দেশনা দেয়নি বলেও তিনি জানান।