হায় ছাত্রলীগ নেতা!
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ (এমএম কলেজ) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এক নেতাকে শনিবার পিঠমোড়া করে বেঁধে পিটিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বছরের ২ সেপ্টেম্বর শহরের সার্কিট হাউসপাড়ার বাসিন্দা নূরুল ইসলাম স্ট্রোক করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এমএম কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল করিম রহমান দলবলসহ এসে দাবি করা চাঁদার টাকা না পাওয়ায় নূরুল ইসলামের বাড়িতে বোমা মারেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নূরুল ইসলাম তাকে দশ হাজার টাকা চাঁদা দেনও। কিন্তু আরও ৯০ হাজার টাকার দাবিতে অনড় থাকে রহমান। একপর্যায়ে তিনি নূরুল ইসলামের বাড়ির দরজা-জানালা খুলে নেন। এই অভাবনীয় সন্ত্রাসের মুখে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নূরুল ইসলাম। কয়েক দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যাকে রেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। দ্য রিপোর্টসহ গণমাধ্যমে তখন খবরটি গুরুত্বসহকারে স্থান পেয়েছিল।
দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সেই ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল করিম রহমানকে শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে পিঠমোড়া করে বেঁধে পিটিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ক্যাম্পাসের এই আলোচিত ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে (এমএম কলেজ) অবস্থান করছিলেন সদর আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। শাসক দলের এই সন্ত্রাসীকে বেঁধে রাখার ছবি দ্য রিপোর্টের হাতে এসেছে।
ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী এবং কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এমএম কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহমানের অত্যাচারে ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসবাসী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, কলেজে ভর্তির নামে আর্থিক প্রতারণাসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। আর এ সব অপকর্মে তাকে শেল্টার দেয় ছাত্রলীগেরই একাংশ।
শিক্ষার্থীরা জানান, চলতি বছর বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে রহমান বহু ভর্তি প্রত্যাশীর কাছ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তিনি কাউকেই ভর্তি করাতে পারেননি। সম্প্রতি ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রী টাকা ফেরতের আশায় রহমানের কাছে গেলে তিনি তার ওপর নির্যাতন করেন। নির্যাতিত ছাত্রী বিষয়টি চেপে গেলেও অন্যরা তা ক্যাম্পাসে রটিয়ে দেন। এ সব কারণে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রহমানের ওপর। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি ক্যাম্পাসে আসা ছেড়ে দেন। শনিবার কলেজে সংসদ সদস্য আসছেন জেনে তিনি কয়েক সহযোগীসহ ক্যাম্পাসে আসেন। খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দলবলসহ রহমানকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তারা ছাত্রলীগ নেতা রহমানকে ধরে পিঠমোড়া করে ছাত্রলীগের টেন্টের কাছে একটি গাছে বেঁধে বেদম পিটুনি দেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রহমানের এ সব কর্মকাণ্ডে এবং সর্বশেষে গণপিটুনি খাওয়ার ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মী ও একাংশের নেতারা। তবে অপরাংশের নেতারা এখনো রহমানের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘রহমান ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত। খড়কী এলাকার এক বাড়িওয়ালার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বাড়িটি থেকে দরজা-জানালা খুলে নেওয়ায় রহমানকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।’
বিপুল জানান, রহমানের দ্বারা প্রতারিত শিক্ষার্থীরা তাকে গণধোলাই দিয়েছেন। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ দাবি করেন, আহত রহমান এখনো সংগঠনের জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তাকে তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সময় পার হওয়ায় রহমান স্বপদে বহাল হয়েছেন।
রিয়াদ বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারির অনুসারীরা রহমানকে বাড়ি থেকে ধরে এনে ছুরি মেরে ও পিটিয়ে আহত করেছেন। এ ঘটনায় নেতৃত্বদানকারীরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রিয়াদ হত্যা মামলার আসামী। জামিনে না থাকলেও পুলিশ তাদের ধরে না।’