কলকাতার রাস্তায় মুখে মুখে রুবেল ও বাংলাদেশ
চিত্রতারকা হ্যাপি হ্যাপি (খুশি) কিনা কলকাতার মানুষ জানে না, তবে রুবেলে হ্যাপি পশ্চিমবঙ্গবাসী। অ্যাডিলেডের ওভালে বিশ্বকাপের ৩৩তম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারানোয় খুশি কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা। বাংলাদেশের টাইগারদের জয় দেখতে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র বাড়িতে ও ক্লাবে টেলিভিশনের সামনে বসেছিল কয়েক কোটি বাঙালী। শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের শেষ ২ উইকেট রুবেল হোসেন নিতেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশ চিৎকার! ‘সাবাস বাংলাদেশ’ বলে উল্লাস করে রাস্তায় বাজি-পটকা ফাটাতে থাকেন তরুণরা। ফেসবুকের ওয়ালে পোস্ট করেন রুবেলের ছবি। ভারতের জাতীয় টেলিভিশন ছাড়াও কলকাতার সংবাদভিত্তিক টেলিভিশনগুলো মমতা-মোদির বৈঠকের মতো গুরুত্বপূর্ণ খবর কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে বাংলাদেশের শেষ আটে ওঠা নিয়ে খেলার খবর পরিবেশন করে।
কলকাতার সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন ২৪ ঘণ্টা তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জয়ের প্রতিবেদন করেছে। এতে রুবেল-হ্যাপির ঘটনাও উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, বিশ্বকাপে জেগে উঠল বাংলা, বাঙালী, বাংলাদেশ। ১১ জন বাঙালীর বিক্রমে বিশ্বকাপ উজ্জ্বল হয়ে গেল। গ্রুপ লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অ্যাডিলেডের ওভালে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের।
ম্যাচের নায়ক বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসাবে শতরানকারী মাহমুদউল্লাহ (১০৩) ও অভিনেত্রীকে ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটা বিতর্কিত পেসার রুবেল হোসেন (৪/৫৩)। প্রসঙ্গত, এই রুবেল জামিনে ছাড়া পেয়ে বিশ্বকাপে খেলছেন।
শুরুতে ধাক্কা খাওয়ার পরেও প্রথমে ব্যাট করে বাংলদেশ করেছিলে ২৭৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৩২ রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের অর্ধেক ইনিংস গুটিয়ে যায়। তবে সপ্তম উইকেটে জস বাটলার-ক্রিস ওকস জুটি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শেষ অবধি অবশ্য দুরন্ত টিম স্পিরিট আর বুদ্ধিমান বোলিং করে ইংল্যান্ডের যাবতীয় প্রতিরোধ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ।
পাঁচ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭।
সেখানে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ২।
গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে আয়োজক নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ হারলেও শেষ আট নিশ্চিত। এই গ্রুপ থেকে বিদায় নিশ্চিত ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের।
আনন্দবাজার গোষ্ঠীর টেলিভিশন এবিপি আনন্দ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে পুল ‘এ’-এর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয়ী হল বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ২৭৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ৪৮.৩ ওভারে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় মর্গ্যান বাহিনী। ইয়ান বেল (৬৩), জে বাটলার (৬৫) ও ওকস (৪২)-দের প্রচেষ্টা কাজে এলো না। ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। আর ছিটকে গেল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল রুবেল হোসেন। তিনি ৫৩ রানে ৪ উইকেট দখল করেছেন। এ ছাড়াও মাশরাফি মর্তুজা ও তাসকিন আহমেদ ২টি করে উইকেট পেয়েছেন।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন মাহমুদউল্লাহ। তার ১৩৮ বলে ১০৩ রান ও মুশফিকুর রহিমের ৭৭ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৭৫ রান তোলে বাংলাদেশ। ৮ রানে ২ উইকেট খুইয়ে দল যখন ধুঁকছে তখন ব্যাট করতে নামেন মাহমুদউল্লাহ। এর পর সৌম্য সরকারের সঙ্গে জুটিতে ৮৬ রান যোগ করেন। সাকিব অল হাসান (২) দ্রুত ফিরে গেলেও মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক জুটিতে ১৪১ রান যোগ হয়। এই পার্টনারশিপ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।