আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় লুব্রিকেন্ট ও গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের নির্দেশ
টানা অবরোধ ও হরতালের নাশকতায় লুব্রিকেন্ট ও এলপি গ্যাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। স্কটের মাধ্যমে জরুরীভিত্তিতে অঞ্চলভিত্তিক ডিপো ও বিক্রয়কেন্দ্রে লুব্রিকেন্ট ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে বিভিন্ন ডিপোতে লুব্রিকেন্টস ও গ্যাসের সিলিন্ডারের মজুদ কমে গেছে। ফলে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় প্রয়োজনমতো লুব্রিকেন্টস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আর সরকারি সিলিন্ডার না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক। গ্যাসের সিলিন্ডার ও লুব্রিকেন্টস সরবরাহ করা হয় সড়কপথে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি গত ৬ জানুয়ারি শুরু হয়। টানা অবরোধ ও শুক্র-শনি ছাড়া সপ্তাহের অন্য ৫ দিন হরতাল পালন করছে জোটটি। এ পরিস্থিতিতে পরিবহনে পেট্রোলবোমা, গাড়ি ভাঙচুর প্রতিদিনই ঘটছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় পরিবহন ঠিকাদাররা লুব্রিকেন্টস ও এলপিজি সিলিন্ডার পরিবহনে অনীহা দেখাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
বিপিসির অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার পুলিশপ্রধানসহ সকল জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হাবিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, সারাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার ও লুব্রিকেন্টস সরবরাহ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের স্কটের মাধ্যমে এ সব পণ্য সরবরাহ করার জন্য জরুরীভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বিপিসির হিসাবে, তিনটি সরকারি তেল বিপণন কোম্পানির মাধ্যমে গড়ে প্রতিমাসে এক হাজার টনের বেশী গ্যাসের সিলিন্ডার ও লুব্রিকেন্টস চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। এতে মাসে গড়ে দুইশত ট্রাকের দরকার হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ায় ট্রাকের সংখ্যা অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।
সারা দেশে বছরে লুব্রিকেন্ট লাগে ১ লাখ টান। আর এলপি গ্যাস লাগে ৩ লাখ টন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে গড়ে ৬০ ট্রাক লুব্রিকেন্টস ও ১২ ট্রাক গ্যাস সিলিন্ডার তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু জানুয়ারি থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা মাত্র ১৮ ট্রাক লুব্রিকেন্ট ও সাত ট্রাক গ্যাসের সিলিন্ডার সড়কপথে পাঠাতে পেরেছে। তবে জরুরী প্রয়োজন থাকায় নৌপথে ও বক্স ওয়াগনের মাধ্যমে অল্প কিছু মালামাল সেনাবাহিনী ও কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তেল বিপণন কোম্পানিগুলো ১০ ফেব্রুয়ারি মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কার্যালয়ে বৈঠক করে। এর পর ১১ ফেব্রুয়ারি পদ্মা ও যমুনা এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি মেঘনা বিপিসির কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিজিবি ও সব বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেয় বিপিসি। কিন্তু তাতে কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিরাজমান পরিস্থিতিতে লুব্রিকেন্টস ও গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ হচ্ছে না। ফলে বিদুৎকেন্দ্র, সুগার মিল, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিশেষ তিনটি সংস্থার গ্রাহকদের কাছে লুব্রিকেন্টস ও গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার সরবারহ করা যাচ্ছে না। জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশ সদর দফতরকে নির্দেশনা দেওয়া হল।