১০ মার্চ : কালো পতাকায় ছেয়ে গেল বাংলা
স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অফিস হচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তাজউদ্দীন আহমদ।
সকল জায়গায় উড়ছে কালো পতাকা। যেন পাকিস্তান নামের দেশটির কবরে পতপত করে উড়ছে কালো পতাকা। কালো পতাকার সঙ্গে সবুজের জমিনে লাল বৃত্তে উড়ছিল হলুদ চিহ্নিত বাংলাদেশের মানচিত্র।
এদিন বঙ্গবন্ধু দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে এদেশের মানুষের যৌক্তিক আন্দোলন বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আহ্বান জানান যেন বিশ্ব গণমাধ্যমে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান অপর এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই শেষ কথা। যারা মনে করেছিলেন শক্তির দাপটে আমাদের উপর তাদের মতামত চাপিয়ে দিবেন, বিশ্বের দরবারে তাদের চেহারা আজ নগ্ন হয়ে ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের জনগণের নামে আমি যে নির্দেশ দিয়েছি সচিবালয়সহ সরকারি ও আধাসরকারি অফিস আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরগুলোতে তা পালিত হচ্ছে।
বাঙালী আন্দোলন ঢেউ তুলেছে তখন দেশের বাইরেও। বাঙালী ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন নিউইয়র্কে প্রবাসীরা। স্মারকলিপি পেশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর।
ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিকামী বাঙালীর পক্ষে অস্ত্র ধরার আহ্বান জানানো হয়।
তৎকালীন দু’টি প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দৈনিক পাকিস্তান’ এবং ইংরেজি দৈনিক ‘দি পিপল’ যথাক্রমে, অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে এবং কালবিলম্ব না করে জনগণের দাবিও মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। দু’টি পত্রিকাতেই পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সমালোচনা করে।
উত্তাল সময়ের এই দিনটি নিয়ে শহীদ জননী জাহানার ইমাম লিখেছেন, ‘রুমী (মুক্তিযোদ্ধা ও ছেলে, পরে শহীদ)বাইরে গেলেই আমার প্রাণটা যেন হাতে কাঁপতে থাকে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে একটা গুলির ব্যবধান মাত্র, কখন আচমকা কোনদিক থেকে তীক্ষ শিসে ছুটে আসে, কে বলতে পারে!’