সরকার অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আহ্বান জানাচ্ছে : ২০ দল
বর্তমান সরকার নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে প্রকারান্তরে অগণতান্ত্রিক শক্তিকেই আহ্বান জানাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
২০ দলীয় জোটের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবৃতিতে বলেন, ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বন্দুকের নলের মধ্যেই রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজছে। কম গণতন্ত্র, উন্নয়ন বেশী এবং আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র ইত্যাদি আইয়ুব খান মডেলের আওয়ামী চর্চায় দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন দু’টোই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পাকিস্তানী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের উত্তরসূরি হিসেবে মুজিবকন্যাকে গণ্য করার চাইতে ইতিহাসে বড় কোনো ট্র্যাজেডি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নত গণতন্ত্রই টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সুবিধাবাদী, সর্ববিনাশী, একনায়কত্ববাদী আওয়ামী রাজনীতির অপচর্চা জাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করছে।’
তিনি বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে সরকার প্রকারান্তরে অগণতান্ত্রিক শক্তিকেই আহ্বান জানাচ্ছে। আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতা ও দুঃশাসন প্রলম্বিত করার লক্ষ্যেই জঙ্গিবাদের জুজুর ভয় দেখাচ্ছে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলকে। দেশে জঙ্গিবাদের কৃত্রিম জন্মদাতাই আওয়ামী লীগ। জনগণের সাথে প্রতারণা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার কুমানসে আওয়ামী লীগ এখন প্রতিদিনই জঙ্গিবাদের ‘টেস্টটিউব বেবী’র জন্ম দিচ্ছে।’
বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘গত রবিবার গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পিয়ারুল ইসলামের বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই দিনে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিনের বাড়ি থেকেও পেট্রোলবোমা ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। জনগণ জানে দেশব্যাপী সকল পেট্রোলবোমা ও নাশকতার সকল নাটকই সরকার পরিচালিত ও প্রযোজিত।’
তিনি বলেন, ‘রবিবার রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে মিঠাপুকুরে নিয়ে পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যা করে জামায়াত নেতা শাহ নাজমুল হুদা লাবলুকে। আমরা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই সময়ের পরিবর্তনে উপযুক্ত আদালতে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র বলেন, ‘গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সরকারি বাহিনীর জুলুম-নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অধিকাংশ তথ্যই দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলের অজানা থেকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, গণগ্রেফতার, জুলুম নির্যাতন, মামলা-হামলা চালিয়ে সরকার প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারবাহিনীর মতো অধিকৃত অঞ্চলে পরিণত করেছে। দেশের জনগণকে এই জুলুম নির্যাতনের আওয়ামী বন্দীশালা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই চলমান গণআন্দোলন বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার গণদাবি মেনে না নেওয়ায় পুনরায় একই দাবিতে আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ চলমান সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি বর্ধিত করা হল। এ ছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার সারা দেশে সকল জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও থানা পর্যায়ে এবং দেশের সকল মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সরকার গণদাবি মেনে না নিলে আমরা আবারও আগামী রবিবার থেকে দেশব্যাপী হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ চলমান অবরোধ-হরতাল এবং বৃহস্পতিবারের গণমিছিল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান জানান।