দূরে রাখুন এগজিমা
সারা শরীরের যেখানে-সেখানে দানা সঙ্গে চুলকানি, কাউকেই বলে দিতে হয় না যে রোগটার নাম এগজিমা। ত্বক বিশেষজ্ঞরা একে বলেন অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস। শৈশব থেকে শুরু হয়ে পরিণত বয়সে যা হতে পারে হাঁপানির কারণ। বেশ কয়েকটি পর্যায় আছে রোগটির।
এগজিমার চিকিত্সা আছে, কিন্তু চিকিত্সা করেও এগজিমা পুরোপুরি সারানো যায় না। তবে কিছু নিয়মকানুন আছে যা মেনে চললে এগজিমা থাকে নিয়ন্ত্রণে। জেনে নিন এগজিমা দূরে রাখতে কী করবেন।
– সাবান ব্যবহার করবেন না। শুষ্ক ত্বককে সাবান আরো শুষ্ক করে দেয়। বরং সাবানহীন বা সোপ ফ্রি পরিষ্কারক ব্যবহার করুন।
– কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। গোসল শেষে গামছা বা তোয়ালে দিয়ে জোরে জোরে গা ঘষবেন না। বরং তোয়ালে বা গামছা দিয়ে চেপে চেপে ত্বকের পানি শুষে নিন।
– নখ ছোট এবং পরিষ্কার রাখুন।
– খুব গরম আবহাওয়ায় থাকবেন না, প্রখর রোদে ঘোরাঘুরি করবেন না, এমন কোনো পরিশ্রমের কাজ করবেন না যাতে দর দর করে ঘাম হয়। গরম থেকে ঠাণ্ডা বা ঠাণ্ডা থেকে গরম পরিবেশে হঠাত্ করে গেলে এগজিমা বাড়তে পারে। বেশি আর্দ্রতাযুক্ত আবহাওয়াতেও এ রোগ বাড়ে।
– খসখসে কম্বল বা উলের পোশাক কখনো ব্যবহার করবেন না। হালকা নরম সুতির পোশাক পরুন। আঁশওয়ালা খেলনা, বেড কভার, বালিশ থেকে এগজিমা বাড়তে পারে। তাই তুলোট বা আঁশওয়ালা জিনিসপত্র এড়িয়ে চলুন।
– গৃহপালিত কুকুর বা বেড়াল থেকেও বাড়তে পারে এগজিমা। তাই থাকুন সাবধানে।
– ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ, স্প্রে, রং, বার্নিশ, তারপিন তেলের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। ল্যানোলিন যুক্ত কসমেটিক, ক্লেনজার, বডি অয়েল, লোশন কখনো ব্যবহার করবেন না।
– ঘন ঘন সর্দি, কাশি, জ্বর হলে আপনার ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েও এগজিমা হতে পারে। তাই এই রোগগুলোকে হেলাফেলা না করে যথাযথ চিকিত্সা করান।
– জ্বর ঠোসা বা ফিভার ব্লিস্টার যাদের ঠোঁটের কোণে দেখা দেয়, তাদের আশেপাশে না যাওয়াই ভালো। যে ভাইরাস এ জন্য দায়ী, সেই ভাইরাসই আপনার সুপ্ত এগজিমাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
– বেনজোকেইন ও অ্যান্টিহিস্টামিনযুক্ত লোশন এবং ভ্যাসলিন জাতীয় চটচটে কোনো মলম এগজিমা রোগীদের ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলো ঘাম নিঃসরণে বাধার সৃষ্টি করে।
– দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক চাপ থেকে এগজিমা বাড়তে পারে। তাই কোনো অবস্থাতেই স্ট্রেস নেবেন না।
– খাদ্যের সাথে এগজিমার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে দুধ, পনির, ভাজাভুজি, টক, সামুদ্রিক মাছ, ডিম থেকে অনেকের এগজিমা বাড়তে পারে। যাদের বাড়ে তারা এসব খাবার এড়িয়ে চলবেন, আর যাদের বাড়ে না তারা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
– এগজিমা আক্রান্ত জায়গায় না চুলকানোর চেষ্টা করুন। যত চুলকাবেন ততই বাড়বে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের আশঙ্কা। বারে বারে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। অনেকে পয়সা বা ধাতব জিনিস দিয়ে চুলকাতে ভালোবাসেন। এই বদঅভ্যাস থাকলে অতিসত্বর ছেড়ে দিন।
– ট্রেন, বাস, রাস্তার পাশে যেসব ওষুধ বিক্রি হয় এগজিমা সারানোর জন্য, দয়া করে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
– এগজিমা থেকে কারো মৃত্যু হয় না। এগজিমা সেরে গেলে হাঁপানি হয়, এটিও সত্যি কথা নয়।
তথ্যসূত্র: ডা. অমিতাভ ভট্টাচার্য, ত্বক বিশেষজ্ঞ, ভারত,
ডা. জেরোম জেড লিট, চর্মতত্ত্ব