জমি পেলে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল করে দেবে চীন
বাংলাদেশে নিজস্ব একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল (Specialized Economic Trade Zone) স্থাপনে আগ্রহী চীন। এ জন্য জমি কিনতে চেয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। প্রস্তাবে চীন বলেছে, তাদের জমি দেওয়া হলে কর্নফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণ করে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত ৫০০ একর সরকারি খাস জমি কিনে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে চীন। প্রস্তাবে চীন বলেছে, ওই খাস জমি তাদের দেওয়া হলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণ করে দেবে। বিশেষ করে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণ করতে কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি সহজশর্তে ঋণ দিতেও আগ্রহী দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সস্তা শ্রমমূল্য ও শ্রম দক্ষতার কারণে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এরই মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে পাঁচটি বৃহৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য কথা দিয়েছে চীন। বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেখভাল করছে। সম্প্রতি চীন একটি শর্ত দিয়েছে- জমি পেলে বৃহৎ প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেবে দেশটি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। শ্রমমূল্য ও শ্রম দক্ষতার কারণে এ দেশে বিনিয়োগ করতে একাধিকবার আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে নিজস্ব একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল স্থাপন করতে চায় চীন। চীনের এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে। এই বিষয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট টানেল নির্মাণসহ পাঁচটি বৃহৎ প্রকল্পে চীন সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মূলত এই বিষয়টি নিয়ে এখন দরকষাকষি চলছে। জমি দেওয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষে দেখছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নজরদারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি বিশেষ দল এই বিষয়ে কাজ করছে। সামনের এপ্রিলে চীনের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত মা মিংজেঙ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে মা মিংজেঙ প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত ৫০০ একর সরকারি খাস জমি চীনকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এর আগে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর এবং ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও জমি এবং টানেল নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীন ঐকমত্যে পৌঁছায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জুনে চীন সফর করেন। ওই সফরকালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশে চীনের জন্য একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চল স্থাপনের ব্যাপারে দু’পক্ষের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের উদ্বৃত্ত উৎপাদন সক্ষমতার একটি অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে চীনের বৃহদাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন।
এদিকে চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত মা মিংজেঙ গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে দেশটির পক্ষে কাজ শুরু করেন। এর পর তিনি একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বর্তমানে চীনে উচ্চ শ্রমমূল্যের কারণে সেখানকার বিনিয়োগকারীরা বিশ্বের অন্য দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এক্ষেত্রে যৌক্তিক শ্রমমূল্য, অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, কঠোর পরিশ্রমী ও দক্ষ শ্রমসম্পদের কারণে বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।’