না’গঞ্জে জিয়া ও খালেদার ছবি ঢাকার পর অনুষ্ঠান
নারায়ণগঞ্জে একটি সেমিনারস্থলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ হয়েছে। এক পর্যায়ে আয়োজকরা ওই দু’টি ছবির উপর সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান শুরু করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের চতুর্থ তলায় বুধবার বিকেলে জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে সরকারি আইন সেবা কার্যক্রমে ‘বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োগ : আমাদের প্রত্যাশা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা। সেমিনারে সভাপতি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ মালিক আবদুল্লাহ আল আমিন। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন।
সেমিনার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার পর পরই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান এ্যাডভোকেট খোকন সাহা। সবাইকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এখানে একটি সরকারি অনুষ্ঠান হচ্ছে। যে অনুষ্ঠানে জেলা জজ ও সহকারী জজসহ বহু সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। এই ছবি এখনই সরিয়ে ফেলা হোক। খোকন সাহা ছবিটি খুলে ফেলার নির্দেশ দিলে বাধা দেন সেখানে উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস।
এ সময় তিনি খোকন সাহাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি কেন ছবি খোলার নির্দেশ দিবেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক আছে, এখানে উপস্থিত আছেন জেলা জজ। তিনি যদি নির্দেশ দেন তাহলে ছবি নামাবেন। পরে জেলা জজ ছবিটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দিলে ছবিটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বিএনপিপন্থী আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমরা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলিনি। তাদের ছবি রেখেই আমরা আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদের অনুষ্ঠান করেছিলাম। আজ আপনারা এটা করে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। নারায়ণগঞ্জ আদালতে আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। কিন্তু এটা সহাবস্থানের নজির নয়।’ এর কিছুক্ষণ পরই অনুষ্ঠান স্থল থেকে উঠে চলে যান এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবি নিচে অনুষ্ঠান করতে তাদের সমস্যা হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু অনুষ্ঠানের আয়োজন তো দলীয় লোকজন করেননি। তারা অনুষ্ঠান করার আগে সেই জায়গা ভালভাবে পরিদর্শন করে নিতেন। ছবি সরাতে হলে আগেই সরাতেন। আমাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে সবার সামনে এভাবে অপমান করাটা উচিত হয়নি। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, লিগ্যাল এইড’র ধারণাটা অনেক পুরনো প্রথার মতো। গ্রামেগঞ্জে অনেক সমস্যার সমাধান স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। কিন্তু যেগুলো আইন সমর্থন করে না। তবুও এ ব্যবস্থা গ্রামে চালু আছে। পত্রিকায় দেখেছি, নারায়ণগঞ্জেও একটি পৌরসভার মেয়র সম্পূর্ণ তার দায়িত্বের বাইরে এসে বিভিন্ন বিচার করছে। মূলত যে সব এলাকায় জমি ক্রয় বিক্রয় বেশী পরিমাণ হয়ে থাকে সে সব এলাকায় এমন নিষ্পত্তি বিচারের নামে পক্ষপাত করা হয়ে থাকে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের অনুরোধ করব, যাতে করে নারায়ণগঞ্জের অফিসটি কর্ম দিবসগুলোতে আটঘণ্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়। প্রয়োজনে আমি কোর্ট পুলিশের সাথে কথা বলে আমাদের কিছু লোক সেখানে নিয়োগ দিব। যাতে করে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই লিগ্যাল এইড থেকে সেবা পেতে পারেন।