আন্তর্জাতিক চাপে সংলাপে যাচ্ছে সরকার, বিএনপি বাদ
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতির উত্তরণে সংলাপের চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এ সংলাপে থাকছে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত রাজনৈতিক দল।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সারা বিশ্বের কূটনীতিকরা বর্তমান সহিংসতা বন্ধ ও আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট উত্তরণের জন্য সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিদেশীদের এমন চাপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে আলোচনায় ডাকা হবে না বিএনপিকে।
এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে ২০ দলে থাকা যে সব রাজনৈতিক দল এই সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে, পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে, তারা চাইলে আলোচনায় আসতে পারে। তাদের ডাকা হতে পারে।’
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, চলমান নাশকতা বন্ধ, নাশকতাবিরোধী বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গঠন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল, নিবন্ধন নেই এমন সংগঠনগুলোর জোট, বিভিন্ন পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সংলাপের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে আগামী ১৪ মার্চ সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল, রাজনীতি করেন না এমন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। আলোচনা করছি। সামনেও এর ধারাবাহিকতা থাকবে।’
নাছিম বলেন, ‘বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ১৪ মার্চ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দল ও সংগঠনের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বসবেন। আর আমাদের যোগাযোগ তো আছেই।’
সূত্র মতে, প্রথম অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দল, পরে জোটের বাইরে থাকা দল, এরপর একে একে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলকে এই সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের সাবেক একজন মন্ত্রী জানান, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন এমন নয়। আমাদের দলের সিনিয়র নেতারাও সবার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
এই নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে তো আমরা সংলাপ করছি। ১৪ দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক নেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মতবিনিময় হয়েছে। সেই হিসেবে আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন।’
জানা গেছে, কয়েকটি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আলোচনা করবেন। অন্য দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করতে পারেন।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন ২৯ দলীয় জোট ও ২০ দলের সাবেক নেতা বর্তমানে ১০ দলীয় জোট ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু সরকারকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানান, যার সঙ্গে আলোচনা করলে দেশে শান্তি আসবে তার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য সরকারকে আহ্বান করেছেন। বিএনপিকে বাদ রেখে যদি শান্তি আসে তাতেও তাদের আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা তো হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তবে ১৪ দলের বাইরে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি ১৪ দলের পক্ষ থেকেই আপনাদের জানানো হবে।’
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে বাদ দিয়ে সরকারের সংলাপের উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘চলমান সঙ্কট নিরসনে সরকারকে আলোচনা করতে হবে বিএনপির সঙ্গে। অন্য যে সব দলের সঙ্গে সরকার আলোচনা করতে চাচ্ছে এরা তো সরকারেরই বি টিম। তাহলে তো আর সঙ্কটের সমাধান হবে না। সঙ্কটের সমাধানের জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গেই সরকারের আলোচনা করা উচিত।’