স্বস্তিহীন ভারতের আছে ভয়, সঙ্গে চাপও

bangladesh-hoহিসাব যা, তাতে কোয়ার্টারে ফেভারিট ভারতই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। যদি কোনো মিরাকল না ঘটে অস্ট্রেলিয়া-স্কটল্যান্ড ম্যাচে। আর সেই ১৯ মার্চের কোয়ার্টারে সুপার ইনফর্ম ভারতকে বাংলাদেশ যদি টপকে যেতে পারে, তাহলে তাই হবে চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ঘটনা৷ বাংলাদেশ যে পারে, সেই বুঝ কিন্তু পেয়ে গেছে বিশ্ব ক্রিকেটের ‘মোড়ল’ গোছের দলগুলো। অর্থাৎ ‘টিম বাংলাদশ’-কে নিয়ে স্বস্তি নেই ভারতীয় শিবিরে। রয়েছে ভয়ের সঙ্গে শতকোটি ভক্তের চাপও। অথচ অনেক ভারতীয়ই সিডনিতে সম্ভাব্য ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনালের টিকিট কাটতে শুরু করে দিয়েছেন৷
ভারত ও বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হতো না যদি নিউজিল্যান্ডকে সাকিব আল হাসানরা হারাতে পারত। বলা যায়, খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে হালে পানি পেয়েছে কিউরা। ২৮৮ রানের পর স্বাগতিক দলটির কাছে ৩ উইকেটে হারার মধ্যে পরাজয়ের কোনো আফসোসের বালাই নেই, বরং হেরেও ক্রিকেট উৎসবে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ, সঙ্গে বাঙালীরাও। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের আপাদমস্তক কাঁপনের প্রতিচ্ছবিই বার বার ফুটে উঠেছে হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে। ওয়াইকাতো নদীর পাড় হয়ে বার বার হাজারো শঙ্কা আছড়ে পড়েছে সবুজঘেরা নৈসর্গিক সেডন পার্ক স্টেডিয়ামে। বিশ্বের সেরা ২০টি স্টেডিয়ামের তালিকায় থাকা সেডন পার্কে মাহমুদউল্লাহ-সৌম্য-সাব্বির-সাকিব পারফরম্যান্সের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। নিউজিল্যান্ড জিতলেও মনে হয়েছে ম্যাককুলামদের কানের কাছ দিয়ে লাল-সবুজের বারুদের গোল্লা ছুটে গেছে। নিউজিল্যান্ড এই ম্যাচে হারলেও তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু বিশ্বকাপে এই প্রথম সব জয়ে প্রথমপর্ব শেষ করার স্বপ্নে তা বড় ঘা হয়ে থাকত।

নিউজিল্যান্ডের বোলিং লাইনআপ নিয়ে যে রাজ্যের গল্প ছিল, প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে-মুড়িয়ে দেওয়ার ইতিহাস ছিল, তা কাগুজে গল্পে হম্বি-তম্বিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারসেরা ১২৮* রানের সেঞ্চুরিই বলে দিচ্ছে প্রথম কথা। তার পর নবীন সৌম্য-সাব্বির-সাকিবের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সব অর্জন ম্লান হয়ে গেছে। মাহমুদউল্লাহর এটা ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে ইংশিলদের অহম মাটিতে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচেও তার ব্যাটে সেঞ্চুরি দেখেছে বাংলাদেশ। ওটাই ছিল কোনো বাংলাদেশীর প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি।
৫ ম্যাচে যা যা করেছে বাংলাদেশ, তাতেই বিশ্বকাপ জিতে রয়েছে! রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশই যেন উৎসবের নগরী৷ বাংলাদেশ ধর্মান্ধতায় ছিন্নভিন্ন নয়, নয় জ্বালাও-পোড়াও অস্থিতিশীল দেশও। বরং বিশ্বাস আর আশার আলোকে উদ্ভাসিত একটি দলকেই দেখছে বিশ্ববাসী। প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া এবং ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন মানে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন সকালের সূচনা। বাংলাদেশ তো বটেই, আইরিশরাও কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এই আয়োজনের বর্ণময় রঙটিও তাদের উপস্থিতির ফলে উজ্জ্বলতর হয়েছে। তাদের অংশগ্রহণ করার ফলেই প্রতিযোগিতায় একটি ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে৷ ফলে ছোট দলগুলোকে বিশ্বকাপ থেকে ছেঁটে ফেলার আইসিসির উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে, যেখানে ছোটদের জন্য শক্তি-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ‘কিংবদন্তি’ শচিন টেন্ডুলকার।

শেষ আটে ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ না হয়ে অস্ট্রেলিয়াও হতে পারে, যা অঘটনের ওপর নির্ভর করছে। অনিন্দ্যসুন্দর ক্রিকেটে কালেভদ্রেই সেই ঘটনার অবতারণা হয়। সেক্ষেত্রে ক্রিকেটীয় সরলীকরণে দেখা যাচ্ছে, কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে ভারতের বিপক্ষেই খেলতে হচ্ছে৷ বাংলাদেশের চলতি ‍বিশ্বকাপে সংখ্যাতাত্ত্বিক কীর্তিনামা কিন্তু ভারতকেও স্বস্তি দিচ্ছে না। পুরানো বাংলাদেশকে ভুলে ‘টিম বাংলাদেশকে’ নিয়ে ভারতের নানা সমীকরণ-অংক কষাকষি কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। ভারতের অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাই বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে সহজ মেনে নেওয়ার একটুও সুযোগ নেই।’
ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার তো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেই দিয়েছেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের সামনে না পড়ে ইংল্যান্ডের সামনে পড়লেই ভাল হতো ভারতের।’ বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ শেষ হতে না হতেই ভারতীয় মিডিয়াগুলোও বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার নিয়ে হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছে।
যা ঘটছে, এর সারবাণ একটাই- বাংলাদেশকে নিয়ে ভয় আছে ভারতের, রয়েছে স্নায়ুর ওপর সৃষ্টি হওয়া অসহ্য রকমের চাপও। টিম বাংলাদেশে যদি ধসে পড়ে ভারতের বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে রেখে দেওয়ার স্বপ্নের বাড়িটার উপর, তাহলে? ক্রিকেট পাগল শতকোটি ভারতীয় কি ধোনিদের তখন মধুর কণ্ঠে অভ্যর্থনা জানাবেন, নাকি ক্রিকেট ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকার ভারতীয় ব্যবসায় সুবাতাস বইবে? ভারতীয়দের তাই ভীত হওয়ার কারণ রয়েছে। গর্জে ওঠা বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল আবিষ্কারের চাপও রয়েছে। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই চাপ-ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে ২০০৭ বিশ্বকাপের স্মৃতি। কে না জানে, ওই আসরে গ্রুপপর্বের খেলায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের কাছে হেরে কেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল ভারতীয়দের!

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend