‘সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভর করে টিকতে চাইছে’

Khaleda-Ziaবর্তমান গণবিচ্ছিন্ন শাসকগোষ্ঠী জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে হত্যা-উৎপীড়নের পাশাপাশি ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও অপপ্রচারণায় মেতে উঠেছে। এ কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, তারা পুরোপুরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে চাইছে। সে জন্য এ সব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের ভার কতিপয় দলবাজ কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছে। ওই সব দলবাজ কর্মকর্তার মাধ্যমে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীকে বিরোধী দল ও জনগণকে নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এ সব অভিযোগ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আজ আবারও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অপহরণ, নির্যাতন, বন্দী অবস্থায় গুলি করে পঙ্গু করা, বাড়িঘরে হামলা, পাইকারি গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের বেআইনী প্রক্রিয়া থেকে তাদের দূরে থাকতে বলছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি বরাবরই সন্ত্রাস ও সহিংসতানির্ভর। অতীতে আন্দোলনের নামে তারা যে ভয়াবহ সন্ত্রাস চালিয়েছে তা সকলেরই জানা। মাসের পর মাস টানা হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ কর্মসূচির নামে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।
খালেদা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে যাত্রীবাসে গানপাউডার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে যাত্রাবাড়ীতে ১৮ জন এবং শেরাটন হোটেলের কাছে ১১ জনকে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। ওই দুই পৈশাচিক ঘটনায় দগ্ধ আরও ১২ জন পরে হাসপাতালে প্রাণ হারান। এ ছাড়া বোমা ও ককটেল মেরে এবং পিটিয়ে তারা বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপরেও আক্রমণ করেছে। তাদের সন্ত্রাসের কারণে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পর্যন্ত পেছাতে হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসেও তারা হরতাল করেছে। যমুনা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধনের দিনে হরতাল দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদী ষষ্ঠ সংসদের নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বর্জন করে সেই নির্বাচন ঠেকাতে তারা ‘গণকারফিউ’ জারি করে দেশব্যাপী হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডব চালিয়েছিল।
২০ দলীয় জোটের নেত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর অচল এবং রেলস্টেশন, যানবাহন, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করেছে। অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্য রাজপথে বিবস্ত্র করেছে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। এ সব পৈশাচিক তাণ্ডবের প্রকাশ্য নির্দেশ শেখ হাসিনা নিজে দিয়েছেন এবং এ সবের বহু দালিলিক প্রমাণও রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ বিচার বিভাগের মর্যাদার কথা বলে। অথচ তারা রায় পছন্দ না হওয়ায় বিচারকদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করেছে। সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে বস্তি বসিয়েছে। দেশের প্রধান বিচারপতির এজলাসে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। ক্ষমতায় বসেই তারা নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছে। সাজাপ্রাপ্ত খুনের আসামিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমায় মুক্ত করেছে।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসের দানব আখ্যা দিয়ে বিএনপিপ্রধান বলেন, এবার আন্দোলন শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছত্রছায়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা, গুম ও বন্দী অবস্থায় গুলি করে পঙ্গু করা শুরু করে।
আমাদের দল-জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়। গুলিতে রিয়াজ রহমানের মতো সজ্জন গুরুতর আহত হন। প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলামসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বাড়িঘর, অফিস ও যানবাহনে গুলি, বোমা হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। আমাদের দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গত দুই মাসে তারা কারারুদ্ধ করেছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
বিরোধী দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে নজিরবিহীনভাবে দীর্ঘদিন ধরে রিমান্ডে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
খালেদা জিয়া আরও বলেন, আমাদের দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় এক মাস ধরে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে নানাভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত বিরোধী দল সমর্থিত মেয়রদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে দলীয় লোক বসানের জন্য তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসা শাসকদের কাছে জনগণের ভোটের যে কোনো মূল্য নেই, তা তারা প্রমাণ করছে। অথচ আমাদের আমলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে ঢাকার মেয়র তথাকথিত ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।
একই দলের নেতা হিসেবে চট্টগ্রামের মেয়র সমুদ্রবন্দর অচল করায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা তাদের বরখাস্ত করিনি।
তিনি বলেন, আমাদের দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেও গত তিন দিনে সরকার স্বীকার করেনি। এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস নেই। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার ব্যাপারেও সরকার প্রথম অস্বীকার করে পরে নাটক সাজিয়ে ২১ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেফতার দেখায়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের বক্তব্য-বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রচার না করার নির্দেশ দেয়। তার পরেও বিএনপি ও ২০ দলের পক্ষে সালাহ উদ্দিন আহমেদের দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারিত হতে থাকায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি আবারও অবিলম্বে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এর পরিণতি শুভ হবে না।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
Send this to a friend