প্রধানমন্ত্রী কবে বলেছেন ‘নিয়ম রক্ষার নির্বাচন’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রশ্ন রেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী কবে, কখন ও কোথায় বলেছেন ‘এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন’।
খালেদার বক্তব্য নির্লজ্জ মিথ্যাচারে ভরপুর।
খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফ এ মন্তব্য করেন।
হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটা মেনে নেওয়া হবে না।’
গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ম রক্ষার নির্বাচন।’ খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হানিফ এ সব কথা বলেন।
মাহবুব-উল আলম হানিফ খালেদা জিয়ার সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘খালেদা জিয়া খুনী। খুনীর সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। দেশে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক কোনো সঙ্কট নেই। দেশে সন্ত্রাস চলছে। আইনগতভাবে সন্ত্রাসের মোকাবেলা করা হবে।’
‘পেট্রোলবোমা মেরে খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করছে’ মন্তব্য করে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার জন্য খালেদা জিয়াকে এক দিন হয়তো বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬৭ দিন ধরে খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ করছে। তাদের অবরোধ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ তাদের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজপথে নামেনি। তার আহ্বানে বিএনপির নেতাকর্মীরাও রাস্তায় নামেনি। রাস্তায় গাড়ি চলছে। দোকান খুলেছে। এ জন্য খালেদা জিয়া জনগণের ওপর পেট্রোলবোমা মারছে।’
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে হানিফ আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের সংবাদপত্রের নাকি কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। দেশের সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হলে একজন ফেরারি আসারি হয়েও খালেদা জিয়া কীভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে পারলেন? কণ্ঠরোধ করা হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচার করতে পারতেন না।’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কখনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না’ দাবি করে হানিফ বলেন, ‘১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের পর বিএনপি অভিযোগ করেছিল নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘এটা সবারই জানা, ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপি অভিযোগ করেছিল। তারা বলেছিল, ষড়যন্ত্র করে তাদের পরাজিত করা হয়। তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কখনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। এ ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচনের আর কোনো সুযোগ নেই।’
মানুষের ভোটের অধিকার খালেদা জিয়াই কেড়ে নিয়েছে- এমন মন্তব্য করে হানিফ বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে খালেদা জিয়া। ভবিষ্যতে হয়তো এ জন্য তাকে এক দিন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তারা কেন অংশ নেয়নি, তা জাতির কাছে পরিষ্কার। কারণ জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এ জন্য বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। জামায়াত-বিএনপি একে অন্যের পরিপূরক, মুদ্রার এপিট-ওপিঠ। এ জন্য তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে।’
হানিফ প্রশ্ন রাখেন, ‘রাজনীতিতে নাকি শ্রদ্ধাবোধ নেই। উনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন জাতি তার রাজনীতির শ্রদ্ধাবোধের নমুনা দেখেছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার, নাটোরের মমতাজ উদ্দিন, খুলনার ফজলুর রহমান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার মতো শ্রদ্ধাবোধ জাতি দেখেছে। খালেদার বক্তব্য তার নির্লজ্জ মিথ্যাচারের একটা অংশ।’
হানিফ বলেন, ‘গোটা দেশবাসীর সঙ্গে আমরা অবাক হলাম। অবরোধ নাটকের পর নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আর কিছুই ছিল না। শুরু থেকে প্রত্যেকটি কথার মাধ্যমে খালেদা জিয়া নিজেকে মিথ্যাবাদী হিসেবে তুলে ধরেছেন। বাইরে থেকে তাকে সুন্দর মনে হলেও তার ভেতরটা পচা ও মাকাল ফলের মতো।’
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া শনিবার সকাল ১১টায় দেওয়া হবে বলেও জানান হানিফ। ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদিকা ফরিদুন্নাহার লাইলী, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।